বাসস
  ১৮ জুন ২০২৪, ২৩:০৯

সুনামগঞ্জে বন্যা: দুর্যোগ মোকাবেলায় ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু ও ত্রাণ বিতরণ

॥ ইকবাল মাহমুদ ॥
সুনামগঞ্জ, ১৮ জুন, ২০২৪ (বাসস): জেলায় বন্যায় মানুষের ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু ও সহায় সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে। থেমে-থেমে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রবল পাহাড়ি ঢলের জল¯্রােত। ভাটির এই জনপদের একদিকে পানি কমছেতো অন্যদিকে পানি বাড়ছে।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসণ অফিসের দায়িত্বরত অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিবুল্লাহ আকন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) জানান, সুনামগঞ্জে চলতি বন্যাসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার সিলেটে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়গণ আসবেন। সেখানে সুনামগঞ্জ জেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণের পরিমাণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেবেন তারা। আমরা এ পর্যন্ত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় পূর্বের দেয়া জিআর চাল ও জিআর ক্যাশ বরাদ্দ থেকে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছি।
সোমবার (১৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আযহার উষালগ্ন থেকেই শুরু হয় এ অপ্রতিরোধ্য বন্যা। প্রতিটি মুহুর্তে নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত করে চলেছে বন্যার পানি। জেলা প্রশাসন পানিবন্দী লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বাধ্য করছেন। ইতিমধ্যে বানভাসী মানুষের সাহায্যার্থে শুরু হয়েছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। বিস্কুট,চিড়া,মুরি কেউবা খিচুড়ি এবং চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করছেন দুর্গত নারী পুরুষের মধ্যে।   
গত এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে পাহাড়ী ঢলে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় সর্বপ্রথম বন্যা ও দুর্যোগ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুনামগঞ্জ ৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য এম মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আমরা ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেই বন্যায় একজন মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেয়নি। আমরা এবারও সরকারের সমস্ত শক্তি ও লোকবল নিয়ে চলতি বন্যার মোকাবেলা করবো ইনশাল্লাহ। তিনি মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরণ ও ছাতক পৌরসভার প্যানেল মেয়র তাপস চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জে সার্বিকভাবে চলছে স্বল্প মেয়াদী বন্যা উল্লেখ করে রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেছি। আমার ইউনিয়নের বিরামপুর, হরিনাপাটি, দূর্লভপুরসহ সুরমার উত্তরপাড়ের প্রায় সবগুলো গ্রামই বন্যা প্লাবিত। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন  প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পুরনো আতংক নিয়েই দিনাতিপাত করছেন সাধারন লোকজন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ বলেন, সারাবছর কুরবানীর ঈদে একটু ভালো খাবারের আশায় অনেক পরিবার অপেক্ষা করে থাকে। কিন্তু সোমবার এবারের ঈদুল আযহার দিনে অনেকের ঘরে রান্নাই হয়নি। এমনকি রান্না করার মত অবস্থাও অনেকের ঘরে নেই। তাই আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্যরে মধ্যে পানিবন্দী মানুষের জন্য কিছুটা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেছি। স্মরণ ও তার সহকর্মীরা খাবার নিয়ে ছুটে চলেছেন বানভাসী মানুষের ঘরে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় মঙ্গলবার (১৮ জুন) ত্রাণ বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ ৪ (সদর বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রেজাউল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি,সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী মান্নান।
জেলার তাহিরপুর উপজেলায় সুনামগঞ্জ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. সেলিম আহমদ ও জামালগঞ্জ উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ দূর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন।