বাসস
  ২২ জুন ২০২৪, ১১:২৪

দিনাজপুরে বিরামপুর উপজেলায় ভাঙ্গা দিঘী প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রেখেছে

॥ রোস্তম আলী মন্ডল ॥
দিনাজপুর, ২২ জুন, ২০২৪ (বাসস): জেলার বিরামপুর উপজেলায়  অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক বৃহৎ দিঘীটি  জেলার ওই এলাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। শুষ্ক মৌসুমে ওই অঞ্চলের পানির শূন্যতার ভারসাম্য ধরে রেখেছে।
সম্প্রতি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার পরিবেশ নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত বিরামপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সাত্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন,  দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের অবস্থিত  খিয়ার মামুদপুর গ্রাম  ও পাটনচড়া বাজারের দক্ষিণে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় ৩০ একরের দীর্ঘাকার এ দিঘীটি অবস্থিত। বিশাল এ দিঘীর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফলের বাগান। এ দিঘীর দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। দিঘীর৫০০গজ দূরে রয়েছে একটি ব্রীজ অতি প্রাচীনতম ব্রিজ।ওই ব্রীজটি  দেশভাগেরও আগে ব্রিটিশ সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়েছে। কালের সাক্ষী হয়ে দীর্ঘ প্রাচীনতম  ব্রীৃজটি এখনো সচল রয়েছে। মজবুত লোহার পাত দিয়ে এ ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ওই ব্রিজের উপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে নিরাপদে।
কথিত ও জনশ্রুতি রয়েছে গত ১৫০০ শতাব্দীর প্রথমাংশে তৎকালীন জমিদারগণ শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকার জনসাধারণ ও প্রজাগনের পানির শূন্যতা দূর করতে  সাগর দিঘী ও ভাঙ্গা দিঘী নামে এ দুই দিঘী খনন করেছিলেন। ওই দিঘী দু'টি তৎকালীন জমিদার প্রজাদের চাহিদা  ও গরু মহিষের গাসলসহ  শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা মিটানোর জন্য ছিল উন্মুক্ত। প্রজারা তাদের চাহিদা মত ওই দু'টি দিঘীর পানি ব্যবহার করতেন। ধারণা করা হয় যেসব জমিদার কর্তৃক খনন কৃত অপার সৌন্দর্যে ভরপুর এ দু'টি দিঘী এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সম্প্রতি ভয়াবহ তাপদাহে ও পানি শূন্যতা মেটাতে ওই দিঘী দু'টি এখন পর্যন্ত এলাকার সর্বসাধারণের পানির চাহিদায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।  সে সময়কার হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক সাগর দিঘীতে তাদের বিভিন্ন পূজা দিতেন।
বিগত দু'বছর পূর্বে ওই দিঘী দু'টি মাটি ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়েছিল।কিন্তু জনগণের বাধার মুখে ওই এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক নিজ হস্তক্ষেপে দিঘী দু'টি ত্রাণ  ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৬২ লক্ষ টাকা   ব্যয়ে সংস্কার কাজ করে পানির গভীরতা বাড়ানো হয়েছে।  
দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এমপি জানান, ওই এলাকার বৃহৎ দিঘী দু'টি সংস্কার করে দিঘির পারে নানা জাতির আমসহ ফলের গাছ সৃজন করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন ওই দিঘীর পাড়ে দর্শনার্থীরা ্র ভ্রমণে আসছেন। দিঘীর দু'টির পাড়ে প্রায় আড়াই হাজার নানা জাতির ফলের গাছ রয়েছে। বৃক্ষ রোপণের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ওই এলাকা অনেক টাই নিরাপদ হয়েছে। দিঘীর পানি সম্প্রতি খারা মৌসুমে সেচ কাজ সহফলের বাগান গুলোতে পানি সরবরাহ করায় বাগানের ব্যাপক উপকার হয়েছে। দিঘীর পাড়ে সৃজনকৃত ফল গাছে চোখে পড়ার মত ফল ছিল।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিরামপুর উপজেলার মধ্যে যতগুলো আকর্ষণীয় বৃহৎর্  দিঘী রয়েছে তাঁরমধ্যে ভাঙ্গা দিঘী অন্যতম। নিকটবর্তী জায়গা গুলোসহ দিঘীটির চারপাশের পাড় গুলো অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও মনোরম হওয়ায় সহজেই দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। দিঘীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ।এ ভাঙ্গা দিঘী সংলগ্ন আমরুর বিল ও উত্তরে একটি সুইচগেটসহ আরও একটি ঐতিহ্যবাহী দিঘী রয়েছে। যা সাগরদিঘী নামে পরিচিত। দুই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ভাঙ্গাদিঘীতে অসংখ্য লোকজন ঘুরতে আসে। পবিত্র ঈদ-উল-হাজার দিন থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দিঘির পারে নানা বয়সে নারী-পুরুষ শিশু ভ্রমণ প্রিয়াসীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছে। এ দিঘী দু'টি এখন ওই এলাকায় ভ্রমণ প্রিয়াসীদের জন্য আকর্ষণীয় নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসন নিজেদের তদারকিতে ওই দিঘী দুটি দেখাশোনা করছেন।  
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, এ দিঘী দু'টি পাড় গুলোতে নানা প্রজাতির ফলের গাছ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্য তালগাছ রয়েছে একাধিক। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলার অনেক স্থানে বজ্রপাত ঘটলে ওই দিঘীর আশ-পাশ কোন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি। পাড়গুলো বেশ উঁচু ও  চওড়া হওয়ায় শীত মৌসুমে দেশীসহ ও বিদেশ হতে নানা প্রজাতির ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির আগমন ঘটে।  অতিথি পাখির আগমনে বিচিত্র পাখির মেলা বসে এ নয়নলোভা ভাঙ্গা দিঘীতে।