বাসস
  ২৯ জুন ২০২৪, ১০:১১

উত্তরাঞ্চলে অর্থনীতির এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক

॥ শহিদুল ইসলাম ফিলিপস ॥
সিরাজগঞ্জ, ২৯ জুন, ২০২৪ (বাসস): দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সিরাজগঞ্জের বিসিক শিল্পপার্ক চলতি বছরের মধ্যে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ শিল্প পার্কটি নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পপার্কটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্প পার্কটি চালু হলে এ অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে অনেক বেকার মানুষ বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা চাকরি পাওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলে শিল্প ও অর্থনীতির চাকা সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। চলতি বছরের জুনের মধ্যে এটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিল্পায়ণ অপরিহার্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশের প্রেক্ষাপটে বিসিক শিল্পপার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কৃষিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে জনগণের জীবনযাত্রার মানউন্নয়নে পরীক্ষামূলক খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তাই এমতাবস্থায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তারা।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী, পশ্চিম মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলটিয়া ও মোরগ্রাম মৌজার অংশ নিয়ে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বিসিক শিল্পপার্কটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট একনেক সভায় বিসিক শিল্পপার্ক প্রকল্পের মূল ডিপিপি অনুমোদিত পায়। ২০১৫ সালে মে মাসে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে জমির পজিশন বুঝে পায়। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে মাটি ভরাট কার্যক্রম শুরু হয়। ৩য় সংশোধিত প্রকল্প ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে একনেক থেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালের পিডব্লিউডি রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
জানা যায়, পার্কের ৮২৯টি প্লটে অন্তত ৫৭০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা রয়েছে। ক্ষুদ্র, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্লট বরাদ্দের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে রপ্তানি ও আমদানিমুখী শিল্প প্লট অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়াও, একটি সবুজ বৃত্তসহ একটি হ্রদ ১০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে বিদ্যামান থাকবে যা পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহয়তা করবে এবং স্থানীয় পরিবেশকে রক্ষা করবে। এছাড়া পার্ক এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক জোন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, আবাসিক কোয়ার্টার, রেস্টুরেন্ট ও মার্কেট স্থাপনসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
শ্রমিক রইচ উদ্দিন বলেন, এখানে নদী ছিল প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠছে। এখানে অনেক বড়-বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এলাকার অনেক বেকার যুবকেরা কাজ পাবে ও মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এ বিষয়ে আরাফাত কনস্টাকশনের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মফিজুল ইসলাম বলেন, সড়ক, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণে দিন-রাত মিলে প্রায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করছে। সড়ক ও ড্রেনের কিছু অংশ কাজ বাকি আছে যা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। এখানে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
রোডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার ইমাম হোসেন সোহান বলেন, সবচেয়ে বড় বিসিক শিল্পপার্ক গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জে। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে খুব তাড়াতাড়ি এখানে মিল কারখান গড়ে উঠবে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটবে।
সিরাজগঞ্জের বিসিক শিল্পপার্কের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়েজিদ বলেন, “অনেক বাঁধা সত্তে¦ও আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। আমরা সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা করছি। এছাড়া প্লট বরাদ্দের লক্ষ্যে আমরা দরপত্র আমন্ত্রণ (বিজ্ঞপ্তি) প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছি। সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুত সময়ের  মধ্যেই উদ্বোধন করা হবে শিল্পপার্কটি। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্কটি উদ্বোধন করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী বলেন, সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কটি এমনটি স্থানে অবস্থিত যেখান থেকে সড়ক রেল ও নৌ-পথের সুব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণেই এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারবেন। এরই মধ্যে পার্কের অবকাঠামগত কাজ প্রায় শেষ।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়