বাসস
  ২৯ জুন ২০২৪, ১০:২৮

জেলা প্রশাসনের উদ্ভাবন ‘গোপালগঞ্জ মডেলে’ চামড়ার সুদিন ফেরানোর আশা

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৯ জুন, ২০২৪ (বাসস):  চামড়ার সুদিন ফেরাতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন  ‘গোপালগঞ্জ মডেল’ উদ্ভাবন করেছে। এ মডেল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে চামড়ায় সুদিন ফেরার আশা করছেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।
জেলা প্রশাসক বলেন, কোরবানীর সময় ৬০ থেকে ৭০% চামড়া সংগ্রহ হয়। এ সময় জাতীয় সম্পদ চামড়া সবেচেয়ে বেশি নষ্ট হয়। নষ্টের হাত থেকে চামড়া রক্ষা। এছাড়া পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও সরকার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতে 'গোপালগঞ্জ মডেল' উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ মডেলের আওতায় কোরবাণীর আগেই  জেলার ৫ উপজেলার ৮৩টি মাদ্রাসা, এতিমখানা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বিনামূল্যে ৫২ টন ৩০০ কেজি লবণ বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জিআর কর্মসূচির আওয়তায় জেলা প্রশাসন ৫১ টন ১ ০০ কেজি  এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ১ টন ২০০ কেজি লবণ বিতরণ করে। জেলা প্রশাসন ও বিসিকের কর্মকর্তারা লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের কলাকৌশল অংশীজনদের শিখিয়েছেন । এ বিষয়ে যুগপোযোগী পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলে জেলায়  ১০ হাজার ৯৯৯টি চামড়া  সঠিক নিয়মে সংগ্রহ ও  সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম আরো বলেন, সংরক্ষিত চামড়া বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব চামড়া  ক্রয়ের আশ্বাস দিয়েছে।  চামড়া সংরক্ষণের ও বিপণনের 'গোপালগঞ্জ মডেল' সাফল করতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। এ মডেল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে চামড়ায় সুদিন ফিরবে বলে ওই কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের  ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মাদ্রাসায় ও এতিমখানা ঘুরে ঘুরে সংরক্ষিত চামড়ার লটগুলো পরিদর্শন করেছেন । তারা চামড়া সংরক্ষণের পদ্ধতি দেখে প্রশংসা করেছেন ।
 ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের  প্রতিনিধি দলের সদস্য চামড়া ব্যবসায়ী নিজাম চৌধূরী বলেন, জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ জাতীয় সম্পদ চামড়া সংরক্ষণে প্রশংসনীয়। চামড়াগুলো সঠিকভাবে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর গুনগতমান ঠিক রয়েছে। আমরা সরাসরি চামড়া কিনব। এখানে মধ্যসত্ত্বভোগী থাকবে না। চামড়ার ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত হবে। সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর প্রচুর কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে সারাদেশের চামড়া নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব ।  গুনগতমান ঠিক রাখতে পারলে চামড়ার সুদিন ফিরবে। আর এতেই দেশের অর্থনীতির চাকা দুর্বার হতে পারে।
গোপালগঞ্জ শহরের কোর্ট জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাও. হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের মসজিদের মাদ্রাসায় স্থানীয়রা কোরাবানীর চামড়া দান করেন। চামড়া বিক্রির টাকা এতিমদের লালন-পালন ও সমজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। প্রতিবছর কোরবানীর চামড়া পানির দামে বিক্রি করে দিতে হয়। এ বছর জেলা প্রশাসক চামড়া সংরক্ষণের লবণ দিয়েছেন। আমরা জেলা প্রশাসন ও বিসিকের পরামর্শে সঠিকভাবে ৬০০ চামড়া সংরক্ষণ করেছি। চামড়া ব্যবসায়ীরা এ বছর চামড়ার ভাল দাম দিতে চাইছে। ভাল দাম পেলে আমাদের এতিমরা ভাল থাকবে ।
 গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, চামড়ার সুদিন ফেরাতে জেলা প্রশাসনের উদ্ভাবিত ‘গোপালগঞ্জ মডেল’টি চমৎকার। এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে রফতানী পণ্যের গতি সঞ্চারিত হবে । এ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা আসবে । দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়