শিরোনাম
ফেনী, ৩০ জুলাই, ২০২৪ (বাসস) : সরকারি ভর্তুকিতে ফেনীর সোনাগাজীর কৃষিতে যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার ও স্থানীয় কৃষকদের এর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এতে শ্রমের পাশাপাশি ফসল উৎপাদন খরচ কমায় কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ফেনীর উপকূলীয় সোনাগাজীতে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ জানান, সোনাগাজীতে গত বছর থেকে কৃষিতে যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হলেও অল্প সময়ে তা কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়েছে। উপজেলায় বর্তমানে সেচ কাজে শতভাগ যন্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহারও ২৫-৩০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর উপজেলায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে ৭ একর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া জমি প্রস্তুতকরণে শতভাগ কর্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, এছাড়াও সমলয় পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিতে। কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের সবসময় পরামর্শ-সহায়তা দিচ্ছে কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজীতে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ৬৩ আধুনিক কর্ষণযন্ত্র, ২টি ফসল রোপণ যন্ত্র বা ট্রান্সপ্লান্টার, ২২টি ফসল কর্তন ও মাড়াই যন্ত্র বা কম্বাইন্ডার হারভেস্টার এবং রিপার ৮টি, ৪টি ফসল মাড়াই যন্ত্র বা থ্রেসার ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও ৪১২টি সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিবছর ১৬ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। এর উপকার ভোগ করছেন উপজেলার ১২ হাজার ২৫জন কৃষক। এছাড়াও অনেক কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নানা ধরনের আধুনিক কৃষি যন্ত্র কিনে নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকদের সহায়তা করছেন।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কৃষিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ফসল উৎপাদনের ব্যয় কমার পাশাপাশি কমছে ফসল ঘরে তোলার সময়সীমাও। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্কতা জেনে কৃষকরা সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ করতে পারছেন। এতে অপচয় কমায় ফসলের ক্ষতিও কমছে, উৎপাদন বাড়ছে। শ্রমিক খরচ এবং উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকদের লাভ হচ্ছে বেশি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য সমতল এলাকায় ৫০ শতাংশ ও হাওড় উপকূলীয় এলাকার জন্য ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। সোনাগাজী উপজেলা উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে সরকারিভাবে আধুনিক কৃষিযন্ত্র পাচ্ছে। কৃষকরা ৩৮ লাখ টাকার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন পাচ্ছেন মাত্র ১২ লক্ষ টাকায়। ঘণ্টায় এটি তিন থেকে চার বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। ফলে ফসল কেটে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত এ মেশিন কৃষকের শ্রম এবং খরচ দুটো সাশ্রয় করছে।
উপকারভোগী কৃষকরা জানান, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন সময়, অর্থ এবং শ্রম সাশ্রয়ী। প্রতি একর জমিতে যেখানে ১২ জন শ্রমিক লাগার সেখানে মাত্র ২ জন শ্রমিক দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় দুই থেকে আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায়।
কৃষক মাকসুদ আলম বলেন, আমি প্রবাস থেকে দেশে ফিরে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হই। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে এলাকার অনেক কৃষকের জমিই অনাবাদি রয়ে গেছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সরকারি ভর্তুকিতে একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্ট মেশিন নিয়েছি। এর সাহায্যে নিজের জমিতে ধানের চারা লাগানোর পাশাপাশি অন্যদেরও সহযোগিতা করছি।
কৃষি উদ্যোক্তা একরাম উদ্দিন বলেন, আমরা গত বার ৫০ একর জমি সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে এবার নিজ উদ্যোগে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাষাবাদ করছি। এবার এ পদ্ধতিতে ৫ একর জমিতে চাষাবাদ করছি। এর ফলে স্বল্প খরচে অধিক লাভ হবে বলে আমি আশাবাদী।
চরচান্দিয়ার আরেক কৃষি উদ্যোক্তা রুবেল জানান, ফসল রোপণ থেকে শুরু করে উৎপাদনের সকল পর্যায়ে যন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে তার। ফসল কাটা-মাড়াই-ঝাড়াই যন্ত্র কম্বাইন্ডার হারভেস্টার, ধানের চারা রোপণের জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, পানি দেওয়ার সেচ যন্ত্র, সার প্রয়োগের জন্য ড্রোন, জমি প্রস্তুতের জন্য টাক্ট্রর, বীজতলা তৈরির জন্য ভ্যাট প্লাটিং, বীজ রোপণের সিডার, ট্রে কীটনাশক এবং সেচ প্রয়োগের যন্ত্র ব্যবহার করছেন তিনি।
যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুবেল বলেন, এসব আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে কম সময়ে, কম খরচে এবং কম পরিশ্রমে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা হয়। ফলে খরচ কমে লাভের পরিমাণ বাড়ে।
যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকদের যন্ত্র ব্যবহার এবং মেরামতের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে সোনাগাজীর কৃষি আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়াও কৃষিতে প্রদত্ত প্রণোদনার সুষম বণ্টন ও কীটনাশক ব্যবহারের জন্য ড্রোন ব্যবহারের উপর জোর দেন তিনি।