শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : মানসম্পন্ন ব্রোঞ্জ গয়নার ব্র্যান্ডিং এর জন্য স্বতন্ত্র লোগো উদ্ভাবন করা হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে গয়নার কারুকাজ খচিত আকর্ষণীয় ডিজাইন, কলার ও স্মার্ট প্যাকেজিংয়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রোঞ্জ পল্লীকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইন, সার্কিট হাউস, ডিসি অফিস, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুরে জিআই পণ্য আউটলেট ও কর্নার স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ফ্যাশন হাউজের মাধ্যমে গয়নার বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের চেষ্টা হচ্ছে । এতে গয়না তৈরীর কারিগরদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান ।
গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) এসব উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা, ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) গত ১১ জুলাই তাদের ওয়েবসাইটে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) জার্নাল প্রকাশ করেছে। এটি গোপালগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, গত ১২ই মার্চ জেলা প্রশাসন ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (ঊউঈ) সহযোগিতায় ডিপিডিটি বরাবর ব্রোঞ্জের গহনার জিআই স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন প্রেরণ করে। ডিপিডিটি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১১ জুলাই জার্নাল প্রকাশ করেছে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৪২টি জিআই পণ্যের মধ্যে গয়না হিসেবে এটিই প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
ই-কমার্স ডেভলপমেন্ট সেন্টারের সভাপতি কাকলী তালুকদার বলেন, ব্রোঞ্জের গয়না সহজে মানুষের কাছে ব্র্যান্ডিং করা যাবে।গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়নাকে নকল ও জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। স্থানীয় কারিগরদের তৈরি অনিন্দ্য সুন্দর এ ব্রোঞ্জের গয়না আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে। জেলার ব্র্যান্ডিং ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে । ব্রোঞ্জের পণ্য হিসেবে এটাই বাংলাদেশ প্রথম পণ্য। এটি বাণিজ্যিকরণ করা যাবে । এ পণ্যটি জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় বিলুপ্ত প্রায় কুটির শিল্পটি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দেশে-বিদেশে এ পণ্যের সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। এতে জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে।
জলিপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী সুকান্ত তালুকদার বলেন, একশ’ বছর ধরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নে ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি হচ্ছে। মধুমতি নদীর মিঠা পানির কারণে এখানকার ব্রোঞ্জের গহনার রং বিশেষভাবে টেকসই ও উজ্জ্বল। নকশার বৈচিত্র্য এবং নির্মাণশৈলীর জন্য এর ঐতিহ্য ও সুনাম রয়েছে। কানের দুল, হার, আয়স্থ, নুপুর, আংটি ও লকেটসহ বিভিন্ন ধরনের গয়না এখানে ১শ’ পরিবার তৈরির সাথে জড়িত রয়েছে। গয়না বিক্রির জন্য এখানে সরকার ব্রোঞ্জ মার্কেট করে দিয়েছে। ব্রোঞ্জ গয়না জিআই স্বীকৃতি অর্জন করায় আমরা আনন্দিত। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
ব্রোঞ্জ গয়না তৈরীর কারিগর প্রকাশ বাড়ৈ বলেন, সরকার পুঁজি, প্রশিক্ষণ, সিটিগোল্ড কালার, অধুনিকায় করা হলে এ শিল্প মাথা উচুুঁ করে দাঁড়বে। এখান থেকে কারিগর, কুটির শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী, হকারসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জণ করতে পারবেন। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এ শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
পাইকের মাদারীপুর জেলার পলিতা গ্রামের সুরেশ বাড়ৈ বলেন, আমি এ মার্কেট থেকে ব্রোঞ্জর বয়লা, দুল, রিং কিনে নিয়ে কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলায় বিক্রি করে। এ আয় দিয়ে আমার ৫ জনের সংসার চলে। আমার মত এ মার্কেট থেকে দেশের ৬৪ জেলার ক্রেতারা ব্রোঞ্জ গয়না কিনে নিয়ে বিক্রি করেন।
উল্লেখ্য ১০০ বছর আগে জলিপাড় গ্রামে তামা, পিতল, দস্তা ও কাসার সমন্বয়ে ব্রোঞ্জ গয়না তৈরী শুরু হয়। পরে ওই গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্রোঞ্জ গয়না তৈরীর কুটির শিল্পটি ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতিকালে চীন ও ভারতের সিটিগোল্ড গয়না ব্রোঞ্জ গয়নার বাজার দখল করে দিয়েছে। তারপরও কানের দূল, হাতের বয়লা ও মাদুলী তৈরী করে শতাধিক পরিবার স্বগৌরবে ব্রোঞ্জ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে।