শিরোনাম
নড়াইল, ৯ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী আগামিকাল শনিবার।
দিবসটি পালন উপলক্ষে এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন,জেলা প্রশাসন,জেলা শিল্পকলা একাডেমীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকালে কোরআনখানি, শিল্পীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মাজার জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল।
জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী জানান, সুলতানের ১০০তম জন্মজয়ন্তী যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতান নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।রাজমিস্ত্রি পিতা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘঁষামাজার মধ্য দিয়ে ছোটবেলায় লাল মিঞার (সুলতান) চিত্রাংকনে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়।অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালিন সময়ে লাল মিঞা নড়াইলের তৎকালীন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের সুদৃষ্টিতে পড়েন। এসময় তিনি সুলতানকে কলকাতায় নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সমালোচক কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক সায়েদ সোহরাওয়ার্দির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। একাডেমিক যোগ্যতা বিচার না করেই ১৯৪১ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অষ্টম শ্রেণী পাস সুলতানকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করা হয়।১৯৪৪ সালে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হন শিল্পী সুলতান।কিন্তু প্রথাগত শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেননি তিনি।ছাত্রাবস্থায় তিনি কলেজ ছেড়ে কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে উপজাতীয়দের সঙ্গে বসবাস ও তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন। পরে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরে বেরিয়ে পড়েন।
শিল্পী সুলতান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিভিন্নদেশ সফর করেন এবং এসব দেশে প্রখ্যাত চিত্রকরদের সঙ্গে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়।১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে শিল্পী সুলতান মাটির টানে দেশে ফিরে আসেন এবং নিজস্ব উদ্যোগে জন্মস্থান নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল ও “শিশুস্বর্গ” নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিশু-কিশোরপ্রেমী সুলতান ১৯৮০ সালে নিজ বাড়িতে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মাণকাজ। ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নামে দ্বিতল নৌকা নির্মাণ করেছিলেন। এ নৌকায় তিনি শিশুদের নিয়ে চিত্রানদীতে ভ্রমণ করতেন এবং নৌকায় বসেই তাদের চিত্রাংকন শেখাতেন। সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি।১৯৪৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শিল্পী সুলতানের ছবি ভারতের সিমলা, পাকিস্তানের লাহোর, করাচি, নিউইয়র্ক, বোস্টন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন, এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকায় খ্যাতনামা বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রদর্শিত হয়।
চিত্রাংকনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পারতেন সুলতান। তাঁর হাতে প্রায়ই বাঁশি দেখা যেত।পুষতেন সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি। তিনি বাড়িতে একটি মিনি জ্যু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।হিংহ প্রাণীকেও তিনি বশে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা হিসেবেও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর চিরকুমার,অসাম্প্রদায়িক এই শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। নড়াইলের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় তাকে সমাহিত করা হয়।