শিরোনাম
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২১ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): জেলার প্রান্তিক চাষিরা কন্দাল জাতের লতি কচু চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। লতি কচুর দেশজুড়ে রয়েছে সুখ্যাতি । ২০২১ সালে প্রথম জেলায় কন্দাল জাতের লতি কচু চাষ হয়। এরই মধ্যে কৃষি নির্ভর জেলা মেহেরপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লতিরাজ কচু চাষ। পতিত ও অনাবাদি জমিতে এ কচু চাষ করে ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্য।
জেলা শহরের উপকন্ঠে দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া (৫৫) এক মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। মেয়ে গৃহিনী। ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। চাষাবাদ করেই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাবু মিয়া চাষাবাদ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। বিঘা তিনেক জমি আছে চাষাবাদের। এর মধ্যে ২৪ কাঠা জমি স্যাতস্যাতে হওয়ায় ধান চাষ করলে ধানে নোনা লেগে যায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ওই ২৪ কাঠা জমিতে ২০২১ সালে কন্দাল জাতের লতি কচু চাষ করেন। কচুর ফুলের সুস্বাদু সবজি হিসেবে দেশজুড়ে চাহিদা রয়েছে। এবছ তিনি ৩ বিঘা জমিতে লতিকচুর চাষ করেছেন। এ কচুচাষ করেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। তার দেখা দেখি ওই গ্রামের অনেকেই কন্দাল কচুচাষে ঝুঁকে পড়ছেন। মেহেরপুর জেলায় এবার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লতি কচুর চাষ হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলার লতিরাজ কচু দেশজুড়ে সুখ্যাতি পেয়েছে । তবে কন্দাল জাতের লতি কচু বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়নি। জেলায় প্রথম বাবু মিয়া কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেন। গত কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক কন্দাল জাতের লতিরাজ কচু চাষ করছেন। তারা লাভবান হওয়াতে জেলায় কন্দাল জাতের লতিরাজ কচুচাষ বাড়ছে।
কন্দাল জাতের প্রথম লতি কচু চাষি বাবু মিয়া জানান-কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ২০২১ সালে ২৪ কাঠা জমিতে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেন। লাগানোর তিন মাস পর থেকেই লতিকচু তোলা শুরু হয়। ক্ষেত থেকে দুই সপ্তাহ পর পর কচুর লতি তোলা হয়। আর এক মাস পর পর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করা যায়। চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। এ বছর তিনি ৩ বিঘাজমিতে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেছে। কন্দাল জাতের লতিকচু হওয়ায় জমিতে সবসময় পানি দিয়ে জমি স্যাসস্যাতে করে রাখতে হয়।
গোলাম হোসেন (৪৫) নামের এক চাষি বলেন- ‘ লতি কচু একবার লাগালে মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আর বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি জমিতে লতিকচু ফলিয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই লতিকচুর চাষ করছেন।
মেহেরপুর সবজি বাজারের ব্যবসায়ী সবজি বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান- উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
লতি কচুর পাইকারী ক্রেতা মেহেরপুর জেলা শহরের আড়ৎদার সামাদ আলী, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী অভিন্নসুরে বলেন- লতি কচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এবার নতুন করে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। চাহিদাও ব্যাপক।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান জানান- মেহেরপুররে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতি কচু চাষ হয় না বললেই চলে। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করেন। লতিকচু চাষে এ সাফল্য অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশেপাশে স্যাতস্যাতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভাব। মেহেরপুরের লতিকচু ভবিষ্যৎতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। কন্দাল জাতের লতিকচু ঘণ করে লাগাতে হয়। এবং সবসময় জমিতে পানি সংরক্ষণ রাখা প্রয়োজন। যাতে লতি ও ফুল বেশী হয়। কারণ লতি ও ফুল উৎকৃষ্ট সবজি হিসেবে বিক্রি হয়। মেহেরপুরে এবার প্রথম কন্দালজাতের লতিকচু চাষ হয়েছে।
মেহেরপুরের বাজারে সুস্বাদু আমন কচু খুচরা ২৮ টাকা থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর কচুর মূল্য বেশি পেয়ে চাষিরা বেজায় খুশি।