শিরোনাম
জয়পুরহাট, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): হাঁস পালন করে সফল হয়েছেন প্রতিবন্ধী আনোয়ার। এখন স্বপ্ন দেখছেন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার। যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ফলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনোয়ার পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলতো তার সংসার। আনোয়ার বিয়ে করার কিছুদিন পর যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলো তখন তার বাবা খরচের জন্য তাকে কিছু টাকা দেয়। বাবার দেওয়া সে টাকায় বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে ৮ টি হাঁস কিনে শুরু করে লালন পালন । এক সময় হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। সেই ডিম থেকে শুরু করেন বাচ্চা ওঠানো। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে খামার। বাড়তে থাকে সংসারের আয় রোজগারও । এভাবেই নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয়েছে আনোয়ারের হাঁস পালন। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার।
কালাই উপজেলার আঁওড়া গ্রামের তসকিন উদ্দিন ধলুর ছেলে আনোয়ার । তার জম্ম একই উপজেলার পুর গ্রামে হলেও তার মামার বাড়ি আঁওড়া সোনাপাড়া গ্রামে বেড়ে ওঠা । আনোয়ার রাজমিস্ত্রীর কাজ করার পাশাপাশি ২০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। ২০১১ সালে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে পা ভেঙে যায়। চিকিৎসা করেও ঠিক মতো হাটতে না পারায় আনোয়ার হয়ে যান প্রতিবন্ধী। সাংসার চালানোর এক মাত্র ভরসা ছিলেন আনোয়ার নিজেই । এ কারণে তার সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন । অনেক কষ্টে স্ত্রী মর্জিনাকে সাথে নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা আর পরিশ্রমে ঘুরে দাঁড়ায় আনোয়ার । প্রতিবন্ধী রাজমিস্ত্রী আনোয়ারের খামারের হাঁস বেশিরভাগ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে দ্রুত বড় হয়। এতে খরচ কম হয় ফলে লাভ থাকে বেশি। চলতি বছর ৬৫-৭০ দিনে হাঁস পালনে ৩ লাখের বেশি টাকা লাভের আশা করেন প্রতিবন্ধী আনোয়ার।
আনোয়ার তার সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, পা ভাঙ্গার পরে যখন সুস্থ হয় তখনো সংসার ছিলো টলমল। এ সময় আমার শ্যালিকা ৪০ টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে সহযোগিতা করে । সেখান থেকে আয় হয় দশ হাজার টাকা। এরপর ধীরে ধীরে হাঁসের সংখ্যা বেড়ে যায় । অনেকেই আমাকে নিষেধ করলেও আমি শুনিনি। হাঁস লালন পালন করায় আমার বাড়তি আয় আসতে শুরু করে সংসারে ।
তিনি বলেন, বছরে এ সময় একবার যখন মাঠ ফাঁকা থাকে তখন হাঁস পালন করলে খুব লাভবান হওয়া যায়। তখন হাঁসের চাহিদাও থাকে বেশি, ভালো দামও পাওয়া যায়। গত বছর ১ হাজার ২০০ বাচ্চা কেনাসহ পিছনে ৯০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ দিনে লাভ হয়েছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। অন্য কাজ করে এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এ বছর খাকি ক্যাম্বেল বাচ্চা তুলেছি ২ হাজার ৮ শ। এর মধ্যে বিক্রি করেছি ৩ লক্ষ টাকা। খামারে থাকা হাঁস আরও ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করার আশা প্রকাশ করেন আনোয়ার ।
আনোয়ার জানায়, ২ হাজার ৮ শ বাচ্চা লালন পালনে খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ৬৫-৭০ দিনে বাচ্চার একেকটি ওজন হয়েছে ৮০০-১০০০ গ্রাম। খাকি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা লালন পালনের উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। এ সময় মাঠ-ঘাটে পানি থাকায় প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ায় খরচ কম হয় ফলে লাভ বেশি থাকে । প্রতিবন্ধী হলেও খামারটিকে অনেক কষ্টে এ পর্যন্ত এনেছি। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে খামারটিকে আরো বড় করতে পারবো। বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমার খামারে কাজ করে অনেক যুবক বেকারত্ব দুর করতে পারবে ।
কালাই উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাসান আলী বলেন, ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ খামারিদের সরকারি যে সুবিধা আছে সেটা আমরা দিয়ে থাকি। ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দেওয়ার সুযোগ হয়না । সরকার মাঝে মাঝে প্রণোদনা দেয় সেটা আমরা খামারিদের মাঝে বন্টন করে দেই। রেজিস্ট্রেশন পাওয়া খামারি মালিক ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিতে চাইলে সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি ।