বাসস
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৪৮

খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

খাগড়াছড়ি, ২৬ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরো উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে।
পানি নেমে যাওয়ার ৫ দিনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি খাগড়াছড়ি জেলার ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা এখন কি করবেন তা নিয়ে দিশেহারা। জেলায় প্রায় ১ লক্ষাধিক পরিবার কমবেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেরই কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বানের পানিতে ভেসে যায়। অতিস্রোতে রাস্তা ও সেতুর ক্ষতি হয়েছে। কৃষি খাতে ২ হাজার ১২৪ হেক্টর ফসলি জমির আমন, আউশ ও শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম রবিশস্য চাষে প্রণোদণা দেয়া হবে।জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান জানিয়েছেন ,খাগড়াছড়ি জেলায় বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ৫০২ মেট্টিক টন খাদ্য শস্য ও নগদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন । এদিকে চেঙ্গী, মাইনী  ও ফেনী নদীর পানি কমায় জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড়  ও মহালছড়িতে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি ও কৃষি জমি ছাড়া অন্যান্য জায়গা থেকে পানি নেমে গেছে। পানি নামার পর ও জেলার দীীঘনালা ও রামগড় উপজেলার অধিকাংশ কৃষি জমি এখনো পানি নিচে । চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলার দীঘিনালা উপজেলা।মাইনী নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠায় এটি মাইনী ভ্যালি হিসেবে পরিচিত উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নটি  ৫দিন ধরে বন্যার পানি নিচে। কিছু কিছু গ্রামে ঘর বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে  ফসলি জমি থেকে পানি নামে নাই। ফলে এখানকার কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।মেরুং ইউনিয়নে শতশত একর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার  মেরুং ইউনিয়নের পূর্নচন্দ্র কার্বারি পাড়ার কৃষক সুমতি রঞ্জন চাকমা জানান , ছয় কানি( প্রতি কানি সমান ৪০ শতক) জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তিনি। প্রতি কানি জমিতে বর্গা বাবদ দিতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আগস্ট মাসে দুই দফায় বন্যায় ডুবেছে। তবে সবশেষ চারা রোপণ করার কয়েক দিন পর থেকে বন্যা শুরু।  গত ২২ আগস্ট  ধানের চারা ডুবতে শুরু করেছে, আজ ৫ দিন হয়ে গেলো এখনো ধানের জমি পানির নিচে। দু”বার জমি নষ্ট হওয়ার পর আর কিছু করার নেই। এখন বন্যার পানি কমলেও নতুন করে চাষ করার মতো সময় নেই। তাছাড়া সার,বীজ এবং শ্রমিকের মজুরী বাবদ যে অর্থ খরচ হবে সেটাও হাতে নেই। এখন আমরা কি করব?" মেরুং বাজার এলাকা, ভুয়াছড়ি, চংড়াছড়ি, রশিকনগর, বেতছড়ি, মধ্য বোয়ালখালি, বোয়ালখালি, তারাবুনিয়া, পাবলাখালি, শান্তিপুরা, মিলনপুরসহ ৫০টির বেশি গ্রাম আগস্টের সবশেষ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। মাইনী নদীর তীরবর্তী এসব এলাকায় আমনের চাষাবাদ করেছে কৃষক।  কৃষকদের অভিমত বন্যা ১থেকে ২ দিন স্থায়ী হলে ধানের চারার তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্ত টানা ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ায় অধিকাংশ ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে।
মেরুংয়ের আরেক কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, ‘দুই কানিতে চাষ করছি। এ মাসে দুই বার ধান রোপণ করলাম। আগস্টের শুরুতে একবার সব নষ্ট হয়ে গেছে। এবার এখনো সব চারা পানির নিচে।’
মেরুং বাজার থেকে এখনো পুরোপুরি পানি নেমে যায়নি। বাজারে লাউ আর করলা বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিনুল ভূইয়া বলেন, ‘বন্যায় আমার ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধানে গেছে ১৫ হাজার টাকা,বাড়ির পাশের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছি সেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার  সবজি বিক্রি করতে পারতাম সব বন্যায় গেছে।’
সবচেয়ে নীচু এলাকায় হওয়ায় মেরুংয়ে বন্যা স্থায়ী হয়েছে। দীঘিনালার বাবুছড়া, কবাখালি ও বোয়ালখালি ইউনিয়ন থেকে পানি নেমে গেলেও মেরুংয়ের ৩ ০ গ্রামে এখনো পানি আছে। মেরুং ইউনিয়নের ৭নং ওর্যাডের ইউপি সদস্য সমীরণ  চাকমা বলেন , ‘বাঁচা মরং এলাকা থেকে হেডম্যান পাড়া পর্যন্ত  পুরোটায় ধানি জমি।এ  গ্রামে ১শ ৪০ পরিবার আছে সবাই কৃষক। তারা সকলেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। হাজাধনমুনি পাড়ায় ধানি জমি বাকি অর্ধেক সবজি,অনিদ্য কার্বারি পাড়া,নেত্রজয় কার্বারি পাড়া পুরে ধানি জমি। কিন্ত বন্যায় সব শেষ।  অনিন্দ্য কার্বারি পাড়ায় কয়েকটি পানের বরজ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের কোন সহযোগিতা এখনো আসেনি।সরকারি প্রণোদনা না পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।’
দীঘিনালার উপজেলা কৃষি অফিসার মো.শাহাদাৎ হোসেন জানান,বন্যায় আমনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।বন্যার পানিতে ৭শ ৬৫ হেক্টর জমির আমন চারা নষ্ট হয়েছে।  এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩শ ২৩ জন  কৃষক। এ ছাড়া ৯০ হেক্টর আউশ এবং ১শ৩৯ হেক্টন জমির  সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।এতে প্রায় ৮শ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করেছি। আগামী কাল আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালকের সাথে কথা বলে পরিকল্পনা নির্ধারণ করব। আমনের চারা রোপণের এখন আর সময় নেই। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আগাম রবিশস্য চাষাবাদ করার জন্য প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড় ধ্বসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়লে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সড়কের দুই দিক থেকে মাটি সরানো হয়েছে । বর্তমানে খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়ক যোগাযোগ চালু করা হয়েছে ।তবে দীঘিনালা ও সাজেক সড়ক এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি । বন্যায় সড়ক যোগাযোগ খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো পুরপুরি নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি।