বাসস
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৩৯
আপডেট  : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:২৬

আওয়ামী লীগ আমলের সকল চুক্তি বিস্তারিত প্রকাশের আহ্বান

ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং অধিকার কর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিদেশী দেশগুলোর সাথে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাক্ষরিত সমস্ত চুক্তি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আজ গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে এক  সমাবেশে তারা ক্ষতিকর ধারা বাতিলেরও আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকার ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সাথে বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছে। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী সব চুক্তি  বিশদভাবে প্রকাশ এবং সেগুলো বাতিলের  জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বিশেষ করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
লেখক ও শিক্ষাবিদ সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমান সরকারের বৈধতা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভরশীল। যতদিন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ করবে ততদিন এর বৈধতা থাকবে।
বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকারের কাজ করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হবে।"
তিনি ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ছাত্র রাজনীতি সীমাবদ্ধ করা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. সামিনা লুৎফা, প্রবীণ চিকিৎসক ডা. হারুনুর রশীদ, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়–য়া, ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিক ও হরিজন সম্প্রদায়ের পূজা রানী দাস প্রমুখ।
‘জনগণের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলা প্রকল্পগুলো কীভাবে শেখ হাসিনার পতনের পরেও চলতে পারে?’ প্রশ্ন তোলেন আনু মুহাম্মদ।
‘অবশ্যই প্রকল্পগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে বিশাল ক্ষতি হতে পারে তবে এই প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখলে আরও বেশি ক্ষতি হবে’ বলে  যুক্তি দেন তিনি। 
তিনি বলেন ‘আমাদের দাবির সমর্থনে আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও তথ্য রয়েছে। সরকার চাইলে আমরা আরও ব্যাখ্যা করতে পারি।’
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আনু মোহাম্মদ বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সন্ত্রাসবাদ বা দখলদারিমুক্ত করতে হবে। কিন্তু রাজনীতি হওয়া উচিত। ছাত্রদের রাজনৈতিক চেতনা ও সম্পৃক্ততা না থাকলে তারা কীভাবে দেশকে বৈষম্যমুক্ত করবে।
জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাকে 'গণহত্যা' ও 'জনতার সহিংসতা' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি না থাকলে একাডেমিক অঙ্গনে এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে কে?
তিনি আরো বলেন, যারা এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তারা কোনো সংগঠনের নাম ব্যবহার করেনি তবে তাদের প্রতি অবশ্যই কারো আশীর্বাদ আছে ও কোথাও থেকে  ক্ষমতা পেয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত-নিহদের পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে নিতে হবে। আহত ও নিহতদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত, আমরা প্রতিটি শহিদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহতদের ব্যক্তিদের এক লাখ  টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছি। আহতদের জন্য এক লাখ কিন্তু তা যথেষ্ট নয়, বরং দায়িত্ব নেওয়া এবং টেকসই কিছু করা বাঞ্ছনীয়।
সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিটিকে অবশ্যই ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার বা বৈষম্যকে সমর্থনকারী বা পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন সব আইন অপসারণ করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাপক আলোচনা ও জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধানের খসড়া তৈরি করতে হবে।