বাসস
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৩

জাজিরার পাইনপাড়া চরের দুই শতাধিক পরিবার পদ্মার ভাঙনের শিকার

শরীয়তপুর, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : পদ্মার ভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলঅর পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের চতুর্দিকে পদ্মা বেষ্টিত পাইনপাড়া চর। দুই শতাধিক পরিবার ভাঙন ও ঝুঁকিতে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
এছাড়া ও  ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ ও ৪টি মক্তবসহ দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও প্রায় ৬শ’
হেক্টর আবাদি জমি ভাঙন ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরী সহায়তা প্রদানসহ পুনর্বাসনের জন্য তালিকা প্রস্তুত করছে। গত দুই বছর থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধে কাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে দুই মাস আগে থেকে এ বর্ষায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে পদ্মার পানি কমতে থাকায় গত দুই সপ্তাহ থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে জানায় ক্ষতিগ্রস্তরা। শীত মৌসুমে চরের পাশের পদ্মা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারনে ভাঙন তীব্র হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এলাকাবসীর দাবি ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপের।
পাইনপাড়া আলমখার কান্দি গ্রামের বিলকিস বেগম (৭০) বলেন, গত ১০,১২ দিনের ভাঙনে এ পঞ্চাশের বেশি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে ও ভাঙন ঝুঁকিতে বাড়ি—ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। আজ আমাদের বাড়ি ঘর পদ্মা সেতু সংলগ্ন মাঝিরঘাট এলাকায় সরকারি জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। আমার পরিবার এখন ভুমিহীন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া আমাদের পরিবারগুলোর জন্য যদি সরকার একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমরা অন্তত মাথা গোজার ঠাঁই পেতাম।
একই গ্রামের সেলিম শেখ (৬৫) বলেন,প্রায়  ২৫বছর আগে এ চরটি জেগে ওঠে। তখন থেকেই আমরা এখানে বসতি গড়ে তুলি। গত দুই বছর থেকে পাইনপাড়া চরের চারপাশ থেকে বালু খেকোরা রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকে। সেই কারনে বর্ষাকাল আসলেই ভাঙন শুরু হয়। শুরু হয় আমাদের আতংকে দিন কাটানোর পালা। যদি এ চরটি রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে হয়তো আমরা এখানে বসবাস করতে পারব। পাইনপাড়া চরটি ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা চাল,গম টাকা পয়সা সাহায্য চাই না ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা চাই।
পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আলতাফ হোসেন খান বলেন, ২৫ বছর আগে পদ্মার মাঝ খানে ৮৫০ হেক্টর এলকা জুড়ে পাইনপাড়া চরটি জেগে ওঠে। তখন থেকেই ধীরে ধীরে এখানে বসতি গড়ে ওঠতে থাকে। পাইনপাড়া চরের দুইটি গ্রাম আলমখার কান্দি ও আহমদ মাঝি কান্দিতে এখন চার শতাধিক পরিবার বসবাস করে। ইতিমধ্যে দুই বছরের ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ ও ৪টি মক্তবসহ আড়াই শতাধিক পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বর্ষায় জিওব্যাগ ডাম্পিং করে জরুরী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী ভাঙন রোধ হচ্ছে না। যদি স্থায় ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে কালক্রমে পুরো চরটিই পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই এ চরটি রক্ষায় স্থায়ী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।  
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দেওয়ান রকিবুল হাসান বলেন, প্রতি বর্ষায়ই আমরা ভাঙন রোধে জরুরী ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে থাকি। ইতিমধ্যে পাইনপাড়া চরে বিগত দুই বছরে ৩০ হাজারেরও বেশি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। ভাঙন কবলিতদের দাবি অনুযায়ী স্থায়ী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পেশ করব। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করব।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম বাসস’কে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা পাইনপাড়া চরের ক্ষতিগ্রস্ত দুইশ পরিবারকে জরুরী সহায়তা প্রদান করেছি। পুনর্বাসনের তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া পদ্মা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করছি। যাতে করে আগামীতে চর থেকে বালু উত্তোলন জনিত কারনে আর ভাঙন দেখা না দেয়।