বাসস
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৪৪

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে নানা ষড়যন্ত্র দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে হবে

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র দৃঢ়ভাবে মোকাবেলায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। বক্তারা বলেন, ‘ফ্যাসিষ্ট ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীন-দুইভাবেই দেশকে অশান্ত এবং বিতর্কিত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এসব ষড়যন্ত্রকে কঠোরহস্তে দমন করে একটি সাম্যের ও স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস’ আজ বিকেলে ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ও বর্তমানে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থানে নিহত ৫ সাংবাদিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
বক্তারা বলেন, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি জীবনের তোয়াক্কা না করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব কলম সৈনিক জীবন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এসব বিপ্লবী অগ্রসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, কালেরকন্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার ও আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজে’র সহকারি মহাসচিব বাছির জামাল ও ‘লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস’ এর পরিচালক ফজলে এলাহী ভুঁইয়া প্রমুখ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দৈনিক আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী। 
এসময় নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী, তাহির জামান প্রিয় ও শাকিল হোসেনের পরিবারের  সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, একটি দেশ গঠনে সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশী। বিশেষ করে এই সরকারের। এই সরকার ছাত্র-জনতার গণবিপ্লব ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত এবং আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে সান্তনা দেবার ভাষা কারো নেই। আমি দেখেছি যে মানুষটির দুটি পা ছিন্নভিন্ন এবং এখনো রক্তে জমাট হয়ে আছে ক্ষতস্থানে, শরীর থেকে দুটি পা আলাদা হয়ে গেছে, উপুড় হয়ে শুয়ে আছে তারপরও একটা স্বস্তির হাসি হেসে বলছে ভাই “ইয়েস ! উয়ি মেইড ইট”। 
তিনি আরো বলেন, আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের একজন নোভেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে এদেশের সরকার প্রধান হিসেবে পেয়েছি। যার নামের সঙ্গে আমরাও আলোকিত হই। আমরা যখন দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় যাই, তখন বলি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন। অন্য বিদেশী বন্ধুরা তা শুনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। 
মুশফিক বলেন, বিগত ১৫ বছরে অনেক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, অর্থকষ্টে পড়েছেন, মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে স্বপ্রণোদিত হয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবসহ গণমাধ্যমের সম্পাদক, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সাংবাদিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ২৬৬ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন, তাদের ডাটাবেজ আপনাদের থাকা উচিত। কে কখন ও কোথায় নিহত হয়েছেন এবং তাদের পরিবারের কি অবস্থা সেসম্পর্কেও তথ্য জানা উচিত। নিহত সাংবাদিকদের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ এবং আহত সাংবাদিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য  দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেইসব ত্যাগীদের কারণেই আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সভাপতির বক্তৃতায় কবি হাসান হাফিজ বলেন, নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের সঙ্গে আমরা বেঈমানি করবো না, তা করা উচিত হবে না। কেননা তাহলে এ আন্দোলন, বিপ্লব ও সফলতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। 
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, এই বিপ্লবে টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের পাশাপাশি অনেক সাংবাদিক নিহত ও আহত হয়েছে । ৫ জন সাংবাদিক তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তাদের তথ্য পাওয়া গেছে কিন্তু অসংখ্য সাংবাদিক নিহত বা আহত হয়েছে, সেসব খবর আমরা জানি না। তিনি এসব সাংবাদিকদের সহায়তায় সাংবাদিক সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।