বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:২১

চাকরিজীবী হত্যা ও মাদরাসাছাত্র গুলিবিদ্ধের ঘটনায় হাছান-নওফেলসহ দুই মামলায় আসামি ৭০২

চট্টগ্রাম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নগরের মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের সামনে মো. আলম (৪৫) নামে এক চাকরিজীবীকে হত্যা ও মুরাদপুর এলাকায় মো. সুজন (১৪) নামে এক মাদরাসা ছাত্রকে গুলি করে আহত করার অভিযোগে পৃথক দুই মামলা রুজু করা হয়েছে। দুই মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আসামী করা হয়েছে ৭০২জনকে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পুলিশ দুই মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের ডবলমুরিং থানায় হত্যা মামলাটি করেন নিহত মো. আলমের ভাই জামাল উদ্দিন। এবং একই সময়ে পাঁচলাইশ থানায় গুলিবিদ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রের মামা মোহাম্মদ রিদুওয়ান বাদি হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করেন।
ডবলমুরিং থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় অন্য আসামীরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, এমএ লতিফ, মো. দিদারুল আলম দিদার, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোলেমান আলম শেঠ, সাবেক কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, মোবারক, তৌফিক আহম্মদ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, আব্দুর সবুর লিটন, পুলক খাস্তগীর, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, এসরারুল হক ও জহর লাল হাজারীসহ ২২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ বলেন, মো. আলম হত্যার ঘটনায় থানায় ২২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলা এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে নগরের ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের সামনে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। বিপরীতে কিছু দুষ্কৃতকারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, গুলি ও অগ্নিসংযোগ করে। মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া গুলি লাগে ভিকটিম মো. আলমের মাথায়। পরে মো. আলমকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মা ও শিশু ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই বিকেলে মো. সুজন (১৪) নামে এক মাদরাসা ছাত্রকে গুলি করে আহত করার অভিযোগে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানসহ ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী মাদরাসাছাত্র মো. সুজন (১৪) নোয়াখালী জেলার সদর থানার চরমোল্লা এলাকার বেরামারা গ্রামের মো. বেলালের ছেলে। সে চান্দগাঁও এলাকার আল জামিরুল হায়াত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, রবিবার রাতে মাদরাসা ছাত্রের মামা মোহাম্মদ রিদুওয়ান বাদি হয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করে।  
মামলার উল্লেখযোগ্য বাকি আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, গত ১৮ জুলাই বিকেলে তার ভাগিনা মো. সুজন  মাদ্রাসা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। মুরাদপুর এলাকার এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক শো-রুমের সামনে পৌঁছামাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কর্মসূচি চলাকালে আসামিদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা গোলাগুলিতে রূপ নেয়।
আসামিদের গুলিতে ঘটনাস্থলে থাকা মাদরাসা ছাত্র ও বাদীর ভাগিনা মো. সুজন তার ডান পায়ের হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হন এবং অনেক পথচারী আহত হন। পরে সুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে অপারেশন করে তার পায়ের গুলি বের করা হয়।