বাসস
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৪

কুমিল্লায় বন্যায় ক্ষতি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্ল (দক্ষিণ), ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, এবারের বন্যায় জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার ৩৬২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বানের পানির ¯্রােতে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে ও বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৮৪ কোটি টাকার বেশি।
 নদী ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জেলার বুড়িচং ও নাঙ্গলকোট  উপজেলার। কবলিত হয় সদর ও দেবিদ্বার উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম। আর উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয় চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জসহ ১০টি উপজেলা। এবারের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার ১৪টি উপজেলায়ই বানের ¯্রােতে কৃষি খাত, মাছের ঘের, পুকুর ও দিঘি, প্রাণিসম্পদ, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মানুষের ঘরবাড়ি, ইটের ভাটা, আসবাবপত্র, টিওবয়েল, এমনকি স্বাস্থ্যখাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একজন বাসসকে বলেন, ‘হঠাৎ পানি চলে আসায় এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হয়েছি, কেউ কিছু আনতে পারে নাই। আরেকজন বলেন, ঘেরের মাছ সব ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। মানুষ এখন খুবই অসহায়। ভয়াবহ বন্যায় জেলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমান প্রায় ১৬শ' কোটি টাকা। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারি এবং ব্যক্তি পর্যাযের সহায়তা  চলমান রযেছে।
কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বাসসকে বলেন, বন্যার পর মাছের রোগ বালাই বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে মৎস্যজীবীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বাসসকে বলেন, এবারের বন্যায় কুমিল্লায় কৃষকরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রণোদনা, বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ, ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ায় সহায়তা, বিনামূল্যে কৃষি সেবা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে কৃষি উপকরণ বিনামূল্য দেওয়া অব্যাহত আছে যাতে আগামী কয়েক মৌসুম নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, জেলায় চার হাজারেরও বেশি গবাদি পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দুই লাখ ৯ হাজার বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন বলছে, এ পর্যন্ত ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার (জিআর) নগদ বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া জিআর চাল ৮০২ টন, ১৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য, সাড়ে দশ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কুমিল্লায় এবারের বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৮ টাকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বুড়িচং উপজেলায়। গোমতী নদীর বাঁধ এ উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় ভেঙেছিল। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, এ উপজেলায় ৫৫৬ কোটি ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪৩ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তা ও সড়ক। ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নাঙ্গলকোট। এ উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৫২৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বেশি। জেলার চৌদ্দগ্রামে ৪৬১ কোটি, লাকসামে ৩৯২ কোটি, কুমিল্লা আদর্শ সদরে ৩৩১ কোটি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২৫৮ কোটি টাকা, দেবীদ্বারে ২৩৫ কোটি, মনোহরগঞ্জে ১৭৫ কোটি, বরুড়ায় ১২১ কোটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ১১৫ কোটি, লালমাইয়ে ৭১ কোটি, তিতাসে ৫৬ কোটি, মুরাদনগরে ৪৭ কোটি ও দাউদকান্দিতে ৯ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সব কিছু এবং সব খাত হিসেব করে। সরেজমিনে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, গোমতী নদীর পানি অনেকটাই কমে গিয়ে মূল নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণপাড়ার আছাদনগর এলাকায় এখনো পানি থইথই করছে। তবে পানিতে ডুবে থাকা সড়কগুলো ভেসে উঠেছে। তলিয়ে যাওয়া আমন ধানসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে থাকা আধাপাকা ধান কোমর সমান পানিতে নেমে তুলছেন কৃষকেরা। অনেকের বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধভাঙা পানি মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকেই গৃহহীন হয়ে গেছেন। আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় হতাশায় পড়েছেন এসব মানুষ। অনেকের বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেলেও আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়ছেন না এসব কারনে। বাড়িঘর মেরামত বা নতুন করে তৈরীর আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের। মনোহরগঞ্জ উপজেলাতেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বাসসকে বলেন, এবারের বন্যায় ক্ষতি আমাদের ধারণার থেকে বেশিও হতে পারে। এখনই নিশ্চিতভাবে আমরা কোনো পরিসংখ্যান করিনি। দুর্যোগ শেষ হলে আমরা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তা নিরূপণ করবো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে।