শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইডব্লিউএএমএ কিমিনোরি বাংলাদেশের চলমান ক্রান্তিকালীন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনে সহায়তা দিতে জাপানের প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কাঠামোর অধীনে কী প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করতে আমরা নতুন সরকারের অংশীজন ও বাংলাদেশের জনগণের সাথে যুক্ত হতে প্রস্তুত। আমাদের অবস্থান হল- নতুন সরকারের চাহিদা ও অনুরোধে সাড়া দেওয়া এবং সে অনুযায়ী সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া।’ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ফর্মার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক’- শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতাকালে জাপানের রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
কিমিনোরি ব্যবসা, প্রতিরক্ষা ও দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে সহযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশকে তার সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য জাপানের প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, জাপান তার নিজস্ব সমাজ এবং বাংলাদেশে পরিচালিত জাপানি ব্যবসার স্বার্থের সাথে তার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করবে।
এওএফএ সভাপতি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজম ও রাষ্ট্রদূত শাহেদ আক্তার। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক নাইলুর নাহার।
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, ৩ শতাধিক জাপানি কোম্পানি বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশে ক্রান্তিকালীন সময়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ সত্ত্বেও এই কোম্পানিগুলোর কোনটিই প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী সমাজের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জাপানসহ আরও বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন আর এটি অর্জনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে।’ আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে বিনিয়োগ আকৃষ্টের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা হিসেবে উল্লেখ করে দূত বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কিমিনোরি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জাপানের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, টোকিও চলমান পাবলিক-প্রাইভেট জয়েন্ট ইকোনমিক ডায়ালগের (পিপিইডি) মাধ্যমে বাণিজ্য সম্পর্ক ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) সাথে চলমান আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী এবং দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে।এ কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে জাপান বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান থেকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজীকরণ পর্যায়ে এসেছে। সম্প্রতি দুই দেশ তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্সের (ওএসএ) অধীনে ৫৭৫ মিলিয়ন ইয়েন অনুদানের জন্য নোট বিনিময় করেছে। দূত বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের সাথে জাপানের ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) কৌশলের, বিশেষ করে অন্তর্ভুক্তি ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা তুলে ধরেন। তিনি এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও পারস্পরিক সমৃদ্ধির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয় সম্পর্কে কিমিনোরি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি শিগগিরই স্থিতিশীল হবে।
প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে জাপান দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার উদ্যোগকে সমর্থন করে।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ পরিদর্শনের সুবিধার্থে জাপানের ভূমিকার উল্লেখ করেন এবং প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য জাপানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, জাপান শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পাশাপাশি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে সফর বিনিময়ের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দোও বক্তৃতা করেন। তিনি জাপানি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের বাজার অন্বেষণ ও মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস, শাসনব্যবস্থার উন্নতি ও দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলো মোকাবেলার দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান, যা আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আন্দো বলেন, আরও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ পুনঃস্থাপনের এটাই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৫টি মন্ত্রণালয় রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারী কাঠামোকে আরো বর্ধিত ও গতিশীল করতে পারে।
কিমিনোরি বলেন, বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়েও দেশটির সাথে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের প্রতি জাপানের অবিচল প্রতিশ্রুতি, দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থনকেই নিশ্চিত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, উভয় দেশ তাদের সম্পর্ককে ব্যাপক অংশীদারিত্ব থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার জন্য তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করার পদক্ষেপ নিয়েছে- যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় তাদের অভিন্ন স্বার্থকে প্রতিফলিত করে। অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) জন্য চলমান আলোচনা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারণে উভয় দেশের প্রতিশ্রুতিকে ইঙ্গিত করে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ যেহেতু তার উত্তরণ অব্যাহত রাখছে, জাপানের অংশগ্রহণ আগামী বছরগুলিতে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হবে।