শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : কন্যাশিশুর জন্য বৈষম্যহীন ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে হলে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা।
আজ রাজধানীর দোয়েল চত্বরস্থ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা আরো বলেন, কন্যাশিশুর জন্য বৈষম্যহীন নিরাপদ ও ধর্ষণ ও ঈভটিজিংমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সবার আগে প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব পরিবর্তন না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া সম্ভবপর নয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন. মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জাতীয় মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক কেয়া খান. জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, সেফ দি চিলড্রেন বাংলাদেশ এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটার রিফাত বিন সাত্তার, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুদের জন্য একটি নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু, যাদের অর্ধেকই কন্যাশিশু। তাই আমাদের ভবিষ্যতের নাগরিক এই কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, কন্যাশিশুর বিকাশের সব সুযোগ নিশ্চিত করতে এবং তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। আমরা যে সমাজে বাস করছি সেখানে শিশুদের জন্য নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে হবে। কন্যাশিশুদের চোখে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার দেখতে হবে স্বপ্ন। সারাদেশে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হলে বাল্যবিয়ে বন্ধ, শিশু নির্যাতন ও যৌনহয়রানি বন্ধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া হ্রাস ও মানসিক দক্ষতা বাড়াতে পারলেই শিশুরা দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
শিশুদের অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতে একটি স্বাভাবিক ও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেলক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলায় র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তানিয়া খান বলেন, বাল্যবিবাহ এবং মেয়েদের জন্য অনিরাপদ পারিপার্শ্বিকতা কারণে কন্যাশিশুরা ঝরে পড়ছে। সবক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য নিরাপদ জায়গাটা সৃষ্টি করা জরুরি। যেখানে আমরা অবাধে বিচরণ করতে পারবো। সন্ধ্যার পরে একজন ছেলে যেমন বাইরে একাকী ঘুরতে পারে, তেমনি একজন কন্যাশিশু বাইরে ঘুরতে পারে না। আমাদের সেই নিরাপদ পরিবেশটি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নারীর জন্য সেই পরিবেশটি আমরা চাই, সুযোগ আর সুবিধাও চাই। যারা সেই সুযোগ নেওয়ার জায়গাতে অবস্থান করছেন, তারা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করবে। যারা সে অবস্থানে নেই, তাদেরকে সাহস রাখতে হবে। নিজেদেরকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস রাখতে হবে। কন্যাশিশু ও নারী নিজের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাহসী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এর যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজনে উন্মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।
‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এর সামনে থেকে একটি র্যালী শুরু হয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। প্রতিবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। এ শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস হিসাবে।