বাসস
  ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:১১

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নদ-নদীর পানি দ্রুত কমায় বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি

রংপুর, ১অক্টোবর , ২০২৪ (বাসস): আজ সকাল ৯ টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় প্লাবিত  নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদী বেষ্টিত চর এলাকা থেকে বন্যার পানি দ্রুত হ্রাস অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কর্মকর্তারা জানান, এ সময়ের মধ্যে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উজান থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা পানির হার ক্রমাগত হ্রাসের ফলে সবগুলো প্রধান নদ-নদীর পানির  দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
আজ সকাল ৯টায় অববাহিকায় বিডবিউডিবি’র সকল মনিটরিং পয়েেন্ট সবগুলো নদীর পানি নিজ নিজ বিপৎ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলার প্রধান নদীগুলোর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে নদীভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
বিডবিউডিবি’র রংপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমান বাসস’কে জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে। নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ কিছু স্থানে অতি জরুরী ভিত্তিতে নদীর তীর রক্ষার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির স্তর আরো ৩০ সেন্টিমিটার এবং নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির স্তর আরও ১০ সেন্টিমিটার কমেছে।
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎ সীমার  ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানির স্তরের আরও দ্রুত হ্রাসের ফলে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ধরলা কুড়িগ্রামে বিপৎ সীমার ২৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং দুধকুমার আজ সকাল ৯ টায় কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎ সীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আজ সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎ সীমার ২৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, হাতিয়ায় ৩০৪ সেন্টিমিটার এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎ সীমার ২৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আজ সকাল ৯টায় যমুনার পানি ফুলছড়িতে বিপৎ সীমার ২৯১ সেন্টিমিটার, সাঘাটায় ২৩০ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ২৬২ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ২৩৮সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ২৫৩ সেন্টিমিটার এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎ সীমার ২২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রহমান বলেন, “বিডব্লিউডিবি’র রংপুর জোনের আওতাধীন রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির স্তর দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ”
রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আজমল হোসেন বাসস’কে জানান, বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হলেও ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘবে জেলা প্রশাসন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার বন্যাপ্রবণ এলাকায় বিডব্লিউডিবি’র কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন্যা ও নদীভাঙন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি আরও বলেন, বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও জেলা প্রশাসক ও ইউএনও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, এবার বৃহত্তর রংপুরের পাঁচটি জেলার ১৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমের অস্থায়ী বন্যায় ১ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানির নীচে তলিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “দুর্গত এলাকা থেকে পাওয়া সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, রংপুর লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার নিচু ও চর এলাকার অধিকাংশ নিমজ্জিত ফসলের ক্ষেত থেকে ইতিমধ্যেই বন্যার পানি নেমে গেছে।”
ওবায়দুর রহমান বলেন, "চলতি মৌসুমের অস্থায়ী বন্যার সময় ফসলি জমি ডুবে যাওয়ার পর থেকে মাত্র দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবার সর্বনিম্ন হতে পারে।"