শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস): নতুন পরিবেশে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনে আজ উৎসবমুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রায় তিনমাস পর সশরীরে ক্লাস শুরুর মধ্য পুরোপুরি সচল হলো এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ।
সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা দলে-দলে বিশ^বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। সকাল ১০ টার মধ্যে হাজার-হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস মুখর হয়ে ওঠে। এ যেন এক অপূর্ব মিলনমেলা। আতঙ্ক-শঙ্কা কাটিয়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে শিক্ষাঙ্গনে ফিরতে পেরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই উচ্ছ্বসিত। পাশাপাশি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক(সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী ক্লাস আজ শুরু হওয়ায় আনন্দে নতুনমাত্রা যোগ করেছে।
এ নতুন যাত্রার শুরুও হয় চমৎকারভাবে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের সম্মান জানিয়ে। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে ‘লাল ব্যাজ’ ধারণ ও পতাকা হাতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমবেত হন। এখানে আন্দোলনের শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন- যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক।
কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অভূতপূর্ব সংস্কারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করবো। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেবো। আজ বীর শহিদের জন্য দোয়া-প্রার্থনা করে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করছি।
এ কর্মসূচির পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যোগ দেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি অল্প কয়েকদিন আগে। এ সময়ের মধ্যে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের বইমুখী করার ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম এতো কম সময়ের মধ্যে দূর করা সম্ভব নয়। তবু আমরা রাত-দিন শ্রম দিয়ে একটা ভালো পরিবেশ আনার চেষ্টা করেছি। আজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন এক অধ্যায়র সূচনা হলো।
তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে আর কোনো অনিয়ম যেন ফিরে আসতে না পারে আমরা সে চেষ্টাই করে যাবো। আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারি, আমার সময়ে কোনো ধরণের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কোনো অনিয়ম ঘটতে পারবে না।
বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম নছরুল কদির বলেন, চবিতে আজ অভূতপূর্ব এক পরিবেশ দেখেছি। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে প্রাণের স্পন্দন। সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। ভয়-ভীতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে না কাউকে। বহুবছর এ রকম পরিবেশ দেখা যায়নি। আশা করছি, এ পরিবেশ ধরে রেখেই আমরা সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহিদদের প্রথমেই আমরা শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আগামীতেও বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস অক্ষুণœ রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি পালন কর্মসূচির কারণে ওইদিন থেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরদার হলে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন প্রশাসন। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ আগস্ট আবাসিক হল খোলা ও ১৯ আগস্ট ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। তবে ভিসি, প্রো-ভিসির পদত্যাগসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মুখে বিশ^বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের, উপ-উপাচার্য বেনু কুমার দে ও মো. সেকান্দর চৌধুরীসহ ১৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র-ছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ-কর্ম স্থবির হয়ে যায়।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর ক্যাম্পাস শান্ত হতে শুরু করে।