শিরোনাম
ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস): রাজধানীতে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ উন্নয়ন দর্শন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা বলেছেন, এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্যের সফল বাস্তবায়নে এর অন্তর্ভুক্ত অন্য সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে। আজ সোমবার রাজধানীর এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘প্রিপারিং ভিএনআরএস: রিভিউইং প্রোগ্রেস এ্যান্ড স্ট্রেন্দেনিং পার্টনারশিপ ফর এসডিজি-১৭ ইন কনটেক্সট অফ এলডিসি গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক কর্মশালায় তাঁরা এসব কথা বলেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের (এসএসজিপি) সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মিজ লামিয়া মোরশেদ । বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পাওটিয়াইনেন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মোঃ শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
কর্মশালায় বক্তব্য প্রদানকালে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রণীত ‘থ্রি জিরো’ ভিত্তিক দারিদ্রমুক্ত, বেকারত্বমুক্ত ও কার্বন নিঃসরণমুক্ত উন্নয়ন দর্শন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বের কাছে ‘থ্রি জিরো’ ভিত্তিক উন্নয়ন দর্শনের একটি উদাহরণ হতে পারে। লামিয়া মোরশেদ বলেন যে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে উক্ত লক্ষ্য অর্জনে কাজ শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের একটি কমিটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের কাজ করছে। এই শ্বেতপত্রের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন ও স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ পাওয়া যাবে লামিয়া।
ইআরডি সচিব মোঃ শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, এসডিজি ১৭ এর মূল সমন্বয়ক হিসেবে ইআরডি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের সাথে কার্যকর ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন ‘২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন একদিকে কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে, তেমনি অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিবে’ ।
বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে সংকল্পবদ্ধ। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এসডিজি ১৭ অর্জনের ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসডিজি ১৭ এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব উজ্জীবিতকরণ ও বাস্তবায়নের উপায়সমূহ শক্তিশালীকরণ।
জাতিসংঘ তার সদস্য দেশসমূহকে নিয়মিতভাবে জাতীয় পর্যায়ে তাদের স্ব-স্ব এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে এই প্রক্রিয়াটির নাম হচ্ছে ভোলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ বা ভিএনআর। এই প্রক্রিয়া হতে আগত ফলাফলসমূহ বার্ষিক ভিত্তিতে জাতিসংঘ আয়োজিত হাই লেভেল পলিটিকাল ফোরাম বা এইচএলপিএফ-এর সময় পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ২০১৭ ও ২০২০ সালে দুইটি ভিএনআর সম্পাদন করেছে। এছাড়া আগামী ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য ভিএনআর-এ বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এসডিজি ১৭ এর লক্ষ্যমাত্রা ও সূচকসমূহের বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থান পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিকট হতে উক্ত বিষয়ে হালনাগাদকৃত তথ্য ও উপাত্তভিত্তিক অগ্রগতি প্রতিবেদন সংগ্রহের লক্ষ্যে এই কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।
অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ তার বক্তৃতায় বলেন, এসডিজি-১৭ অন্য সকল টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পাওটিয়াইনেন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও উপাত্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর আলোকপাত করে বলেন, জাতিসংঘ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধপরিকর।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ও ডেভেলপমেন্ট ইফেক্টিভনেস অনুবিভাগের অনুবিভাগ প্রধান এবং সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর।
গবেষণা সংস্থা র্যাপিড-এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এসডিজি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়টি বর্তমানে বিভিন্ন বৈশ্বিক ঘটনাবলি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
কর্মশালায় এসডিজি ১৭ অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতাসমূহের উপর আলোকপাত করে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন ইআরডি-এর যুগ্ম সচিব ইশরাত জাহান। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুল ইসলাম তার উপস্থাপনায় বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনের একটি সার্বিক চিত্র এবং থ্রি জিরো ও এসডিজি বাস্তবায়নের মধ্যে অন্তর্নিহিত সম্পর্কগুলো তুলে ধরেন।
ইআরডি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।