বাসস
  ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৪২
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৩

দ্বিগুণ গতিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বার্তা সিএমপি'র


চট্টগ্রাম, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত গত ১৫ দিনের সাফল্যের বার্তা তুলে ধরে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এসময়ে সিএমপির ১৬ থানায় মামলা রুজু হয়েছে মোট ১৬২টি, আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১১টি। গত ১৫ দিনে মোট আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৯৪ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ জন।

একইসময়ে ওয়ারেন্ট গ্রহণ করা হয়েছে ৩৩৬টি এবং তার বিপরীতে তামিল করা হয়েছে ২৯২টি। সরকার পতনের পর সারাদেশের মতো সিএমপি’র বিভিন্ন থানায়ও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মনোবল ভেঙে পড়ায় ছন্দপতন ঘটে দায়িত্বপালনে। তবে এবার দ্বিগুণ গতিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বার্তা দিয়েছে পুলিশের এ ইউনি।

বুধবার বিকেলে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির চলতি মাসের আভিযানিক সাফল্য তুলে ধরেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ।

তিনি বলেন, পুলিশের মনোবল যখন একেবারেই ভেঙে গিয়েছিল সেই অবস্থা থেকে এখন সিএমপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা পূর্ণ পরিসরে আবার কাজ শুরু করেছি। আগের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি। আমাদের মেট্রোপলিটন এলাকার ১৬টি থানা, ট্রাফিক বিভাগ এবং গোয়েন্দা বিভাগ পুরোপুরি কাজ শুরু করেছে এবং আভিযানিক সাফল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসময় অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি অস্ত্র লুট করা হয়। ওইদিন সিএমপির ১৬ থানায় মোট ৯৪৮টি অস্ত্র লুট করা হয়। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭৮২টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা বাকি অস্ত্রগুলোও উদ্ধার করতে সক্ষম হবো। আর গত ১৫ দিনে ৭টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে দুটি পিস্তল ও বাকিগুলো দেশীয় অস্ত্র।

তিনি জানান, গত ১৫ দিনে সিএমপির ১৬ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোট ১৯ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ৫৮ কেজি। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা হয়েছে ১৬ থানায় ২৬টি। এছাড়া দেশী-বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে।

এক মাসে ট্রাফিকের প্রায় ৩ হাজার মামলা হয়েছে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিক বিভাগ এখন পুরোপুরি সক্ষম। পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর সর্বপ্রথম কিন্তু তারাই সচল হয়েছে। গত এক মাসে ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক মামলা রুজু করা হয়েছে দুই হাজার ৮৭৯টি। জরিমানা সংগ্রহ করা হয়েছে ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে চলাচল করা ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়েছে এক হাজার ৮৯৪টি। রুটপারমিট এবং রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিকশা আটক হয়েছে ৭৩০টি। এছাড়া অন্যান্য রুটপারমিট এবং রেজিস্ট্রেশন বিহীন যান আটক করা হয়েছে এক হাজার ৭৯৮টি।

তারেক আজিজ জানান, গত ২০ দিনে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অবৈধ ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত রেসপন্স করতে সক্ষম আছি। এমনকি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমেও দ্রুত সাড়া দেওয়া হচ্ছে। আপনারা আমাদের কাছে আসুন। অভিযোগ-সমস্যা উত্থাপন করলে তার প্রেক্ষিতে কাজ শুরু করবো।

গত ২৪ ঘণ্টায় কিছু সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন প্রতি মঙ্গলবার নগরবাসীর অভিযোগ ও সমস্যা শুনতে ‘ওপেন হাউজ ডে’র আয়োজন হয়ে থাকে। সেখানে একজন বাকলিয়া এলাকার মাদক সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে গতকাল দিবাগত রাতে ইয়াবাসহ সেই মাদক সম্রাট মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

বায়েজিদ বোস্তামি থানার সাফল্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বায়েজিদ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটার মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে আমরা গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া একই থানা এলাকার রফিকুল হক নামে এক ব্যবসায়ীকে ৬ জন মিলে অপহরণ করে। পুলিশের দ্রুত তৎপরতায় তাকেও উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একইসময়ে পাহাড়তলি থানা এলাকায় ডাকাতি প্রস্তুতিকালে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- বশির, শান্ত, জয় ও সাকিব। তাদের কাছ থেকে দুইটি কিরিচ, লোহাড় রড, একটি চাপাতি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত পুরোনো গামছা উদ্ধার করা হয়েছে।

এছাড়া কমিউনিটি পুলিশ পুনর্গঠনের কাজ চলছে জানিয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, পুরোনো বিতর্কিত কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি তৈরির কাজ চলছে। জনগণের সাথে পুলিশের দূরত্ব ঘোচানো হবে কমিউনিটি পুলিশের এই নতুন কমিটির মাধ্যমে।

প্রতিটি থানায় তিন থেকে চারটি পেট্রোল টিম নিয়মিত কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল পেট্রোলিং চালু হয়েছে। দুইটি মোটরসাইকেল ৪ জন অফিসার থাকেন। তারা অলিগলিসহ সব স্থান পেট্রোলিং করছেন। এই পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে অলিগলিতে আমরা পৌঁছে যাচ্ছি। কারণ গাড়ির মাধ্যমে সকল জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। আর পুড়ে যাওয়া প্রত্যেকটি থানার কার্যক্রমও চালু হয়েছে বলে জানান তিনি।