বাসস
  ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:৪৫
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৬

জুলাই বিদ্রোহের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ফ্যাসিবাদের স্তম্ভগুলো প্রতিহতের আহ্বান আলী রিয়াজের

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ) রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ দেশে জুলাই বিদ্রোহের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যার ওপর ভর করে দেশ শাসন করেছে- ফ্যাসিবাদের সেই  স্তম্ভগুলো প্রতিহত করার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘চারটি স্তম্ভ- প্রতিষ্ঠান, আদর্শিক আধিপত্য, গণমাধ্যম এবং বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে ফ্যাসিবাদ গত ১৫ বছর ধরে টিকে ছিল।  ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে আমাদের এই চারটি স্তম্ভকে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।’

আজ সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে সাহিত্য সাময়িকী কালের ধ্বনি আয়োজিত ‘জুলাই বিদ্রোহে আহত কবি-সাহিত্যিকদের গল্প’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. রিয়াজ এ কথা বলেন।

স্বৈরাচারী আ.লীগ সরকারের পতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদের প্রথম পর্বের পতন প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা এখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারাবাহিকতার দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।’

পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকার অতিরিক্ত বল প্রয়োগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল এবং ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে মানুষকে ভয় দেখিয়েছে উল্লেখ করে  বিশিষ্ট এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, এটি একটি আদর্শিক আধিপত্যও তৈরি করেছিল।

কখনো কখনো আধিপত্যকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের আখ্যান, ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করা এবং ফ্যাসিবাদ অব্যাহত রাখার জন্য ইতিহাসের একটি বিশেষ আখ্যান তৈরি করা হয়েছে।

গত ১৫ বছরে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা তাদের বিবেক বিক্রি করে দাসত্ব মেনে নিয়েছে, যা এর আগে দেশে কখনো দেখা যায়নি বলেন ড. রিয়াজ।

তিনি বলেন, ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও দেশে প্রথমবারের মতো তথাকথিত ও প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী-সাহিত্যিকরা আধিপত্য হিসেবে আন্দোলনে (জুলাই অভ্যুত্থান) যোগ দেননি।

প্রখ্যাত এ  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমাজে এখনও বিরাজমান আদর্শিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি বিকল্প সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং স্বাধীন চিন্তাধারা তৈরির ওপর জোর দেন।

মালিকানার কারণে গণমাধ্যম দেশে গণমাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে না উল্লেখ করে ড. রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি বড় দুর্বলতা হলো দেশে কোনো কর্পোরেট মিডিয়া নেই বরং মিডিয়া অন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশ ক্লেপ্টোক্রেটিক সিস্টেমে শাসিত হচ্ছিলো এবং গণমাধ্যমের মালিকানার কারণে একটি অভিজাত গোষ্ঠীর সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাদের নিজেদের স্বার্থেই  স্বৈরাচারী শাসনের সেবা করেছে।

তিনি গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গণমাধ্যম যাতে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে এবং কোনো ব্যক্তির পূজা না করে সেজন্য মৌলিক নীতি-নৈতিকতা তৈরির ওপর জোর দেন।

বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে ভারত ও চীন ফ্যাসিবাদকে ১৫ বছর ধরে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে উল্লেখ করে ড. রিয়াজ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দিতে না চাইলে  আপনার উচিত  জাতীয়তাবাদী হওয়া এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদ আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, ড. সাকিরা নোভা, লেখক ও সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন মানিক, সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশিদ শাহীন, লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. শিবলী ইসলাম, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও কলামিস্ট শহীদুল্লাহ ফরায়েজী।

এছাড়া আহত কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে হাসান আফিফ, শাহ হুজাইফা ফেরদৌস, হাসান ইমাম, মাসুদ নুর, শেরিফ ফারুকী, কাদের মাজহার, ইব্রাহিম নিরব, আল নাহিয়ান, মো. আসাদুল্লাহ, মোরশেদ আলম হৃদয়, আকতার জামান ও সালেহ আহমেদ খসরু তাদের গল্প তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কালের ধ্বনির সম্পাদক ইমরান মাহফুজ ও লেখক জুবায়ের ইবনে কামাল।