শিরোনাম
ঢাকা, ২০ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : গুম করে ও আটক রেখে নির্যাতন করার অভিযোগে ডিজিএফআই’র মেজর রাকিব ও আশুলিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা খসরু চৌধুরীসহ আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগকারী ড. জাহিদুল হক আজ বাসসকে জানান, আজ সকালে ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন বরাবর মামলাটি দাখিল করলে চিফ প্রসিকিউটর মামলাটি তদন্ত সংস্থার কাছে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়।
এ মামলায় অন্যান্য আসামিগণ হলেন- এমদাদুর রশিদ, জুয়েল ভুঁইয়া, মো. শাহিনুজ্জামান, শেখ ফারসাদ, মাজেদ হোসেন, মারুফ হোসেন, জহুরুল হক, মুশফিক ইসলাম, শফিকুল ইসলাম এবং কয়েকজন পুলিশসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জন। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘আইপিডিসি’ এর কর্মকর্তা বলে অভিযোগকারী জানান।
জাহিদুল জানান, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তুরাগ থানার অধীন দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয় এবং অমানবিক নির্যাতন করার এক পর্যায়ে কিছু নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে সই নেয়া হয়। তিনি আরও জানান, ছাড়া পাবার কিছুদিন পরে জানতে পারেন আশুলিয়ায় তার একটি বাড়ি প্রভাব খাটিয়ে নিজের নামে বন্ধক নিয়ে ত্রিশ লক্ষ টাকা নিয়েছেন মামলায় অভিযুক্ত খসরু চৌধুরী।
তিনি বলেন, মূলত গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য দেয়া ও লেখালেখি করার কারণে তাকে তারা টার্গেট করে। অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর চারদিন পরে তাকে রাতের আঁধারে পূর্বাচল আবাসিক এলাকার কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
একজন আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও নানাপ্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে এবং পরিবারের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় থানা কিংবা গণমাধ্যমে ঘটনাটি এতোদিন জানানো সম্ভব হয়নি।
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবার আশায় ড. জাহিদুল হকের মতো বিগত সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত নির্যাতন, গুম ও হত্যাকা-ের শিকার অনেকে বিচারের দাবিতে ট্রাইব্যুনালে আসছেন।
ড. জাহিদুল হক বলেন, শুধু ন্যায়বিচার কিংবা যথাযথ শাস্তিপ্রদান নয়, বরং তাদের প্রত্যাশা এটার আইনি অমানবিক ঘটনা যেন আর কখনো কারো সঙ্গে না ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত হত্যা গণহত্যার বিচার হবে এ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
গত ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭ অক্টোবর শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ১৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্যদের সংবর্ধনা দেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এছাড়া প্রসিকিউশন টিমের অপর পাঁচ প্রসিকিউটর হলেন- মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুল্লাহ আলর নামান ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার।
অন্যদিকে, ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। যেখানে তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর পদে মো. মাজহারুল হককে (অ্যাডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত) এবং কো-অর্ডিনেটর পদে মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরীকে (পুলিশ সুপার, অবসরপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছে। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গু হয়েগেছে বরণ করেছে ৫ শতাধিক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র জনতা। তাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধের তথ্য চেয়ে সর্বসাধারণের উদ্দেশে গতকাল গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।