শিরোনাম
॥ মহসীন কবির ॥
কুমিল্লা (উত্তর), ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস): আকস্মিক বন্যায় সব হারানো কুমিল্লার গোমতী চরের কৃষকরা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমকে সামনে রেখে নানা রকম সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা।
সম্প্রতি বুড়িচং এলাকার ষোলনল, গোবিন্দপুর, গোসাইপুর কিং বাজেহুড়া ও আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে শীতের সবজি রোপণ ও মাটি চাষে কৃষকদের ব্যস্ত সময় কাটছে। কেউ ট্রাক দিয়ে মাটি চাষ দিচ্ছেন, কেউ কোদাল দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করছেন। এসব জমিতে সারি সারি করে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধা কপি, মুলা, করলা, চিচিঙ্গা, টমেটো, পালংশাক, ডাটা শাক ও লালশাক রোপণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের শাক-সবজির চারা গজিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায় গোমতীর চরের ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করেন । তবে এবারের আকস্মিক বন্যায় তাদের প্রচুর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। শুধু নয়, ঘরে থাকা ধান-চালের বস্তাও সরানো যায়নি।গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন গত কয়েক মাস বাজারে সবজির চড়া দাম। বন্যা বা অতিবৃষ্টি না হলে এ সময় আমাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে যেতো এবং আমরা আর্থিক ভাবে লাভবান হতাম।এতে ক্রেতা-বিক্রেতারাও কিছুটা সুবিধা পেতেন। নতুন চাষ করা ফসল বাজারে যেতে আরও ২৫-৩০ দিন লাগতে পারে। কিং বাজেহড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন- বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে এবার চরের কৃষকরা অনেকটা পিছিয়ে গেছে। তারপরও আমরা আশায় বুক বেঁধেছি। হয়তো শিগগিরই কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে।তিনি আরও জানান অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করেছেন। অনেকের শ্রমিকের টাকা দেয়ার মতো অর্থ নেই। তাই সীমিত করে নিজেরাই চাষ করেছেন। জগৎপুর গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম বললেন- অতিরিক্ত খরচ করে সবজি চাষ করতে হচ্ছে। আগামীতে ফলন আসলেও সবজির দামে তা প্রভাব ফেলবে বলে তার ধারণা।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, গোমতীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে এবার স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বুড়িচংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে উপজেলা কৃষি সম্প্রারণ বিভাগ থেকে বীজসহ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সার ও কীটনাষক সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইয়ূব মাহমুদ বলেন- বন্যার পানি নেমে গেলেও কিছু জমির মাটি এখনও চাষ উপযোগী হয়নি। বিশেষ করে নিচু জমির মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে চরের কৃষকরা শীতের সবজি চাষের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের মধ্যে
বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ বিতরণ করেছি। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত গত ২২ আগস্ট মধ্যরাতে বুড়িচংয়ের বড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকা খাড়াতাইয়া, নানুয়ারবাজার, গোপীনাথপুর, শিকারপুর, গোসাইপুর কিং বাজেহুড়া ও জগৎপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম তলিয়ে যায়। এক সময় এর পরিধি বেড়ে পাশের উপজেলা বাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, হোমনা, তিতাসেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় মাসব্যাপী থাকা বানের পানিতে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ১৪টি উপজেলাবাসী। সরকারি হিসেবে এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এসব এলাকার কৃষকরা।