শিরোনাম
বরিশাল, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : মাটির তৈরি শোপিস দিয়ে সাজুক ঘর। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া মাটির তৈরি খেলনা, বাসন ও শোপিস তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পরা।
সরোজমিনে দেখাগেছে, জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী পালপাড়া এলাকায় মাটির তৈরিদে এই কাজে বর্তমান বর্ষা মৌসুমে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা কিছুটা কম হলেও শুষ্ক মৌসুমে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কারন শুষ্ক মৌসুমে মাটির তৈরি এসব বাসন কোসন, কলস, খেলনা ও বিভিন্ন প্রকার ঘর সাজানো শোপিস শুকানো, রং করা, বেচা-বিক্রির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মৃৎশিল্প কারিগররা।
বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ৩০কি. মি. অদূরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার তুলাতলী নদী পার হলেই এই কলসকাঠী ইউনিয়নের একটি সুপরিচিত নাম পালপাড়া এলাকা।
সরোজমিনে আরও দেখাগেছে, বিভিন্ন ধরনের রং করা মাটির ল্যাম্প, নানান রকমের ভিন্নধর্মী অসাধারন সব সুন্দর সুন্দর টব, নানান আকৃতির দেয়ালে ঝোলানোর মতো মাটির তৈরি টব, খেলনা, থালা-বাসন ও শোপিস পাওয়া যায় এই পালপাড়া এলাকায়। এগুলোতে গাছ লাগিয়ে ঘরের ভেতরে বা বাহিরে রাখলে ঘরে যোগ হবে বাড়তি সজীবতা। সেই সঙ্গে আপনার ঘরের সাজে প্রকাশ পাবে রুচিবোধ ও সৌন্দর্য্য।
বর্তমানে বেচা-বিক্রিও হচ্ছে মোটামোটি ভাল। শুষ্ক মৌসুমে বেড়ে যায় ব্যস্ততা ও বেচা-বিক্রি। মাটির তৈরি এসব টব-শোপিস বিক্রির জন্য কারিগরা চলে যায় বরিশাল ছাড়িয়ে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে।
এ বিষয়ে আলাপকালে মৃৎশিল্প কারিগর গোপাল পাল ও চন্দন পাল জানান, বংশ পরম-পড়া দীর্ঘ প্রায় ১’শ বছরের উপর থেকে এই মৃৎশিল্প তৈরির কাজে নিয়োজিত আমাদের পরিবারের সদস্যরা। অন্য কোন পেশায় যাওয়ারও কোন উপায় নেই। এই পেশার উপার্জন দিয়েই আমাদের চলতে হয়। কোন প্রকার সরকারী সহযোগীতা ছাড়াই আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে মৃৎশিল্প তৈরির কাজে মাটি কাটা বা মাটি সংগ্রহে বেশির ভাগ সময় বেশ কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয়। তখন অনেক চড়া দামে মাটি কাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে মাটি কিনে কাজ করতে হয়।
মৃৎশিল্পী গোপাল পাল ও চন্দন পাল আরও জানান, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় শতাধিক পরিবার রয়েছে এই মৃৎশিল্প তৈরির কাজে। তৈরিকৃত টব বা ছোটখাটো শোপিসগুলো বাজারজাতকরনে সমস্যা এবং প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় অনেকেই এই পেশা থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দরকার।
এ ব্যপারে জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, বাংলার মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মৃৎশিল্প। নিজেদের সংস্কৃতিকে যদি ধরে রাখতে হয়, নিজেকে যদি চিনতে হয় তাহলে এই শিল্পকে ধরে রাখা জরুরি। এসব মাটির তৈরি টব, খেলনা, থালা-বাসন ও শোপিস ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা পরিবেশকে দূষনমুক্ত রাখতে পারি।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার আরও বলেন, বাকেরগঞ্জের মাটি তৈরি প্রাচীন মৃৎশিল্পের বাহারি পণ্যের কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাই তো এসব পরিবার মৃৎশিল্পের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাবির আহমেদ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে জেলার মৃৎশিল্প কারিগর, কামার-কুমার, নৃশিল্প গোষ্ঠি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সমন্বয়ে একটি সঠিক জরিপ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই জরিপ তালিকা চুড়ান্ত হলে এদেরকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফট-স্কিল এবং দীর্ঘমেয়াদি স্কিলে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরও বলেন, প্রশিক্ষন শেষে প্রাথমিক ভাবে এই সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে পৃথকভাবে অনুদান প্রদান করা হবে। যাতে করে এ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন ও বংশগত পেশাকে প্রসারিত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর’র পরিচালক (চলতি দ্বায়িত্ব) মুহাম্মদ মোজহিদুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে।