বাসস
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২০:১৯

জুলাই শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত : শফিকুর রহমান

ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই আগস্টের শহীদদের স্বপ্নের বৈষম্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত। 

আজ রোববার রাজধানীতে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। 

সভায় শহীদ ফারহানুল ইসলামের পিতা বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ফারহান ফাইয়াজ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি-যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তাদের যেন দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আর যেন কোন ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা না হয়। কোরআনের আলোকে সংবিধান করা দরকার। ৭২ এর সংবিধান কেটে ছেটে নিজের মতো করা হয়েছে। আবার যদি সেরকম সংবিধান থাকে, তাহলে আমাদের সন্তানদের ত্যাগ বৃথা যাবে। 

শহীদ আসাদের সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানকে কোলে নিয়ে তার স্ত্রী বলেন, ‘আমার সন্তানের মুখ আমার স্বামী দেখে যেতে পারেননি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। ’ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। 

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে লগি বৈঠার তাণ্ডবে শহীদ পরিবারের সদস্য ও ২০২৪ সালের শহীদ পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

ডা. শফিক বলেন, ‘২০০৬ সালের মাস্টার মাইন্ডদের তাণ্ডবে এ দেশ পথ হারিয়েছিল। মানুষরূপী বর্বর পশুদের জন্য সেদিনের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাভাবিক। তরুণ ও পথহারা জাতি ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করেছে। এতে বহু পবিত্র জীবন ঝড়ে গেছে। কেউ কল্পনা করেনি বাংলাদেশে এমন একটি পরিস্থিতি হবে। আমরা বা কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীও বলতে পারেনি।’ 

আহত ও নিহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি আপনাদের। শহীদদের জাতীয় বীর মনে করি। 

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতিকে জানাতে হবে। 

আমীরে জামায়াত বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদেরকে চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোকে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, আমাদের সামর্থ অনুযায়ী আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের দুঃখগুলোকে নিতে পারবো না। তবে আমরা আহতদের পাশে যাওয়ার চেষ্টা করছি। 
শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত ও আহতদের অনুভূতিগুলো জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল আমি বগুড়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে অন্তত ৫০ জন কালো চশমা পড়া ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন আমরা দুনিয়ার আলো দেখতে পারি না। 

জামায়াত আমির বলেন, পুরো সময় (প্রায় ১৭ বছর) গায়ের জোরে তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছেন। কোনো শাসক নিজেকে দেশের মালিক মনে করলে বা হলে তারা জালিম হন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর ৫ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে। অভ্যুত্থানের পর ৫০০ কিংবা ৫ জনকেও হত্যা করা হয়নি। 

তিনি বলেন, তারা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পৃথিবীতে সব দেশেই বাংলাদেশীরা আছেন। যেখানেই যান আপনাদের ধরে ফেরত পাঠাবে তারা। যেখানেই যাবেন সেখানেই ধরা হবে।

দলের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, শহীদরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। আপনাদের সন্তান-ভাইয়েরা গর্বিত মৃত্যুবরণ করেছেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস খুন ও ধর্ষণের ইতিহাস। গণতন্ত্র নস্যাৎ করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। ভূখন্ড ত্যাগ করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। লাশের ওপর নৃত্য করার ঐতিহ্য ছাত্রলীগের।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জনতার দাবি। গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা সেটি জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে। জনগণ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে গণহত্যাকারী দল রাজনীতি করতে পারবে কি না। এ বিষয়ে জনগণ, আইন ও আদালত বিচার করুক। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু এখনো পারিনি। হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাকশালী আওয়ামী লীগ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের হত্যা করেছে। হাসিনার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করার বিচার এদেশে হতে হবে। শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা করে জামায়াত নজিরবিহীন ভূমিকা রেখেছে। 

এতে আরো বক্তব্য রাখেন, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক  মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুল, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিবির সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ, ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপি সভাপতি এডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল।