শিরোনাম
খাগড়াছড়ি, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির বেত দিয়ে ফার্নিচার তৈরিতে অনেকে এগিয়ে আসছে। এখানকার বেকার যুবকরা বেত দিয়ে ফার্নিচার তৈরি করে আত্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছেন অনেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেতের অবাধ প্রাপ্তিতে এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেত চাষ করছে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যেক্তারা মনে করেন, সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেতের ফার্নিচার পার্বত্য অঞ্চলের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে ব্যাপক আত্ম-কর্ম সংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
খাগড়াছড়ির নয় উপজেলা ও রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বাঘাইহাট,সিজকমুখ ও সাজেক এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর বেত জন্মে। স্থানীয়ভাবে বেতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ইদানিং অনেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গোলা বেত,বুদুম বেত,মরিচা বেতের চাষাবাদ করছে। পতিত পাহাড়ে বেতের চাষাবাদ করে অনেকেই লাভের মুখ দেখছেন।
এছাড়া জেলা সমূহে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বেত এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পরিপক্ষতা পাওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদী বনায়নের পরিবর্তে বেতের বাগান করার প্রতি ঝুকছে। বেতের অবাধ প্রাপ্তির কারণে এখানে অনেকেই এখন বেতের ফার্নিচৃার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আসবাবপত্র বানানোর প্রতি ঝুকছেন। কয়েকজন বেতের ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা জানান, বেতের ফার্নিচার বানানোর প্রতি আগ্রহ বাড়লেও পুঁজির অভাব ও বাইরের বাজার সৃষ্টির সুযোগ না থাকায় স্থানীয় চাহিদার প্রতি নির্ভর করতে হচ্ছে। বাইরে বেতের ফার্নিচারের বাজার সৃষ্টি করা গেলে এখানকার বেতের তৈরি সোফা সেট,বক্স খাট,বুক সেল্ফ,ড্রেসিং টেবিল,রকি চেয়ার,ইজি চেয়ার,খোলা চেয়ার,কোর্ট হেঙ্গার,ফ্রুট হেঙ্গার, দোলনা,কর্ণার,ট্রে সহ নানা জাতের বেতের আকর্ষনীয় সামগ্রী দেশের অন্যান্য জেলাসহ বিদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হতো।
খাগড়াছড়ি শহরের বেত ফার্নিচার শিল্পী লাইপ্রুচাই মারমা জানান, গত ৪ বছর ধরে সে বেতের বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরি করে আসছে অনেকটা নিজ উদ্যোগে। সরকারী ব্যাংক ঋণ ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে, আগ্রহীদের এই কাজে আরও উৎসাহ সৃষ্টি হবে। লাইপ্রুচাই জানান, স্থানীয় বাজারে বেতের তৈরি ফার্নিচারের প্রচুর কদর রয়েছে । অনেকেই সৌখিনতা বশত বেতের ফার্নিচার নিজ প্রয়োজনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। বেতের ফার্নিচার কখনো পুরানো হয় না । এর কদর থাকে সারা বছর। এলাকার পরিবেশ রক্ষায় গাছ বাঁশের পরিবর্তে বেতকে কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগিয়ে বেতের ফার্নিচারকে শিল্পে উন্নীত করা সম্ভব।
স্থানীয়ভাবেও বেতের তৈরি ফার্নিচারের চাহিদা বেড়েছে। আগে এক’শ বেতের দাম ছিল ১২’শ টাকা। এখন তা বেড়ে ২৪’শ থেকে ২৫’শ টাকা হয়েছে। বেতের ফার্নিচার এলাকায় এমনকি বাইরে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, এখানে কাঁচামালের সহজ প্রাপ্তিতে এলাকায় অনেক বেকার যুবক বেতের ফার্নিচার তৈরি করে আত্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব। এই কাজে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পেলে বেতের তৈরি ফার্নিচার এই অঞ্চলের একটি সম্ভাবনায় শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এটি হতে পারে একটি লাভজনক শিল্প। তাছাড়া বেতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার উৎপাদিত বেত প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।