শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : ভবোদহ অঞ্চলের যশোর ও খুলনা জেলার পাঁচটি উপজেলা ও এর আশেপাশের এলাকার ৫০০টিরও বেশি গ্রাম জলাবদ্ধতা ও নদীর তলদেশ পলির কারণে ১৯৮৬ সাল থেকে জলাবদ্ধতার শিকার হওয়া শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাসসকে জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে ৯ লক্ষাধিক লোককে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এবং অন্তত ৭৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির ক্ষতি হয়েছে। এ জলাবদ্ধতা চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপযুক্ত অবকাঠামোর অভাবে ১৯৮৬ সালে ভবোদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়েছিল। তবে গত ১০ বছরে তা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।
১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্মিত অস্লুইস গেট, পোল্ডার ও বাঁধসহ ভবোদহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এটি জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও লবণাক্ত পানির প্রবেশ থেকে মানব বসতিকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই করা হয়েছিল।
এ অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (ডব্লিউডিবি) সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা এবং নদীর তলদেশ ও খালে পলি জমার কারণে দুই জেলার পাঁচটি উপজেলার মোট ৫১৯টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হলো- মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর, যশোর জেলার সদর উপজেলার একটি অংশ ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার একটি অংশ।
চলতি বছরে ভবোদহ অববাহিকা ও এর আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা ও অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় দুই মাস ধরে ওই এলাকার হাজার হাজার বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। এক দশকের দীর্ঘ সমস্যার কারণে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ কয়েক শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে স্বাভাবিক পাঠদানও ব্যাহত হয়েছে।
তারা আরো জানান, ভবোদহে তিনটি নদীর উপর ছয় দশকেরও বেশি পুরানো ৩৩টি ভেন্টের (স্লুইস গেট) কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ভবোদহের উজানে ও ভাটায় নদীর পলি জমে যাওয়ায় নদী প্রায় মজে গেছে। এর ফলে অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, যশোর শহর ও এর আশপাশের এলাকার ২৭টি বিলের ও বৃষ্টির পানি ভবোদহ স্লুইস গেটের ৩৩টি ভেন্ট দিয়ে মুক্তেশ্বরী-টেকা-হোরি, হরিহর-বুড়ি ভদ্রা ও আপার ভদ্রা নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ডব্লিউডিবি দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শুষ্ক মৌসুমে একটি বিশেষ জোয়ার-ভাটা চক্রে প্রায় ৯৬৬ টন পলিমাটি হরি নদীতে প্রবেশ করে এবং ভাটার সময় ২৬৬ টন পলিমাটি নদীর ও বিলের তলদেশে রয়ে যায়। প্রায় ৩১৪৪ টন পলিমাটি বর্ষাকালের নির্দিষ্ট জলো¯্রােতে একই নদী ও বিলে প্রবেশ করে এবং ৫২ শতাংশ পলিমাটি নদীর তলদেশ এবং সংলগ্ন বিলে রয়ে যায়।
ভবোদহ সমুদ্র রেখা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং চলতি বর্ষা মৌসুমে মোট ২০৯৯.২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে- যা আগের বছরের তুলনায় বেশি।
ভবোদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বাসস’কে বলেন, ভবোদহ অববাহিকার ১০ লক্ষাধিক মানুষ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পানির নিচে অমানবিক দিন কাটাচ্ছে। লাখ লাখ কৃষকের ধান ও সবজিসহ সব ধরনের ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, এ দুর্যোগের কারণে এলাকার মানুষকে এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
ওই এলাকার কলেজ শিক্ষক চঞ্চল কুমার রায় বলেন, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পানির নিচে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আবাসিক বাড়ি, মসজিদ, ল্যাট্রিন, নলকূপ, কবরস্থান, শ্মশান ও মন্দিরগুলিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারকে অবিলম্বে এ এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা উচিত। ভবোদহ ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মোতালেব সরদার জানান, এ বছরের তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার মানুষ ধান, সবজি ও মাছসহ সব ফসল হারিয়েছে। তিনি বলেন, ভবোদহ স্লুইস গেটের নিষ্ক্রিয়তা, নদীর তলদেশ ও খালের পলি জমে যাওয়া এবং চলতি বছরের ব্যাপক বৃষ্টিপাত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।