শিরোনাম
সিরাজগঞ্জ, ১ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, শেখ হাসিনা কোনদিন দেশে ফিরতে পারবে না। দেশে ফিরলেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা হত্যাকান্ডের দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের জন্য আতঙ্ক। আওয়ামীলীগ যখনই ক্ষমতায় থেকেছে তখনই মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন, গুম ও খুন করেছে।
আজ সন্ধ্যায় জেলা শহরের গয়লা ঈদগাহ মাঠে শহর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদ সুমন, লতিফ ও রশিদের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ১৯৭১-’৭৫ পর্যন্ত অত্যাচার, গুম, খুন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে চারটি ক্যাম্প স্থাপন করে অনেক মানুষকে হত্যা করে যমুনা নদীতে ফেলা হয়েছিল। যমুনা নদী কথা বলতে পারলে আজ সব বলে দিতো। এসব কারনে আওয়ামী-বাকশাল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল হয়েছিল।
তিনি বলেন, আর বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের লাইসেন্স দিয়েছিল। তারপর আওয়ামীলীগ রাজনীতি ফিরেছিল। এরপর ক্ষমতায় এসে মানুষে ওপর কি পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন, দুনীতি-লুটপাট করেছে, তা জনগন ইতোমধ্যে জেনে গেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ চারিত্রিকভাবে ফ্যাসিস্ট, চারিত্রিকভাবে রক্তপিপাসু ও চারিত্রিকভাবে বিরোধীদল নিধনকারী। তারা একদলীয় শাসন কায়েকম করতে চেয়েছিল। বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দকে দমন করতে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। সিরাজগঞ্জের প্রতিটি নেতাকে ২০ থেকে ২৫টি করে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে।
তিনি শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, আবু সাঈদ বুক পেতে গুলি খেয়েছে। টিয়ারশেলের কালো ধোয়ার মধ্যেই পানি পানি বলে গুলি খেয়ে মুগ্ধ মারা গেছে। অনেক নিরাপরাধ শিশু নিহত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে-এটা বাংলাদেশে প্রথমবার ঘটেছে। এসব শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে ফ্যাসিষ্টদের ঠাই হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ খালেদা জিয়ার কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিল। খালেদা জিয়া সেই দাবী মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েছিল। কিন্ত তিনি পালিয়ে যাননি। তিনি জনগনের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে একতরফা নির্বাচন করেছে। তার অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সব অবৈধ। জনগন নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সিরাজগঞ্জের এক রাজার জন্ম হয়েছিল। সেই রাজার নির্দেশে আমাকে সিরাজগঞ্জে আসতে দেয়া হয়নি। সিরাজগঞ্জে আসলেও গৃহবন্দী করে রাখা হতো। তার নির্দেশে বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদকে দুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাকে একবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
দুর্নীতির উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জে একজন স্কুল শিক্ষিকা ১৫শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। একজন চেয়ারম্যান ৫শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব? সব টাকাই জনগনের টাকা। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের নেত্রী আর কোনদিন আসবে না। তাই মিছিল করার চেষ্টা করবেন না। কারো বাড়ীতে হামলার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন এখন পুলিশ আপনাদের সাথে থাকবে না। জনগণ আপনাদের প্রতিহত করবে। জনগনের হাতে পড়লে মাংস-হাড্ডি আলাদা করে দিবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরো বলেন, আমাকে মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালতের বিচার হাসিনার মনপুত হয়নি। তাই আরেকটি কোর্টে মামলা দিয়ে আমাকে সাজা দেয়া হয়েছিল। আমিও আল্লাহকে বলেছিলাম হাসিনার জেলে আমি জেল খাটবো না-প্রয়োজনে আমার লাশ দেশে যাবে। আল্লাহ দোয়া কবুল করেছে। আজ সেই হাসিনার বিরুদ্ধে সত্য কথা বলার জন্য আমাকে আল্লাহ তায়ালা দেশে এনেছে।
সমাবেশে শেষে তিনি তিনজন শহিদের পরিবারকে ১লক্ষ টাকা করে অনুদান প্রদান করেন।
শহর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ভুইয়া সেলিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সভাপতি রোমানা মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান লেবু, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, যুগ্ম সম্পাদক নুর কায়েম সবুজ, ভিপি শামীম, অমর কৃষ্ণদাস ও শহর বিএনপির সভাপতি মুন্সী জাহিদ আলম প্রমুখ।