বাসস
  ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫৮

ভিন্ন মত চর্চার জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান বক্তাদের

ঢাকা, ২ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : দেশে ভিন্ন মতের চর্চার অনুশীলন এবং লেখকদের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন লেখক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা। 

একটি বইয়ের পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে তারা বলেন, গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশে বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছিল না, যেখানে লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করা হয় শুধুমাত্র লেখালেখি ও বই প্রকাশের জন্য।

আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ রচিত ‘স্বাধীনতা গণতন্ত্র মানবাধিকার/আওয়ামী লীগের শাসানামলে বাংলাদেশ ২০০৯-২০২৩’ বইটির ওপর পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনীম খলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. গীতি আরা  নাসরীন এবং লেখক, গবেষক ও শিক্ষক পারসা সানজানা সাজিদ প্রমুখ এ পর্যালোচনায় অংশ নেন।

আদর্শ  প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশিত বইটি নিয়ে এ পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গীয় সাহিত্য সভা।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বইয়ের লেখক এহসান মাহমুদ এবং অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, এহসান গত ১৬ বছরে তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ওপর ক্ষমতাসীন দলের নিপীড়ন এবং তৃণমূলের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার সংগ্রামকে সফলভাবে উপস্থাপন করেছেন।

২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দৈনিক সমকালে প্রকাশিত লেখকের কলামগুলোর  সংকলন এ বইটি। 

অনুষ্ঠানে আবু সাঈদ খান বলেন, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশের মানুষ ভিন্ন মতের চর্চা করতে পারেনি।

তিনি বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান সফলভাবে ফ্যাসিবাদী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং জনগণের  মধ্যে অনেক আকাঙ্খা তৈরি করেছে।

জনগণের আশা-আকাঙ্খা ধারণ করে কাজ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবু সাঈদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পরবর্তী সময়ে আমরা দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই, যেখানে আমরা ভিন্ন মতের চর্চা করতে পারব।’

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কিছু সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে,যাতে ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশে আর কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের লোকদের স্বাধীনতা ছিল।

তিনি বলেন, ‘কেউ তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। আমরা সেই সময়কালে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ধারণ এবং অনুশীলন করতে পারিনি।’ 

দেশে গণতন্ত্র ছিল না উল্লেখ করে  উপদেষ্টা বলেন, যাকে এখন ফ্যাসিবাদ বলা হয়, এটা ছিল রাজতন্ত্রের আদলে একটি পারিবারতন্ত্র।

‘শুধু আমিই ক্ষমতায় থাকব এবং কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেব না’- এই মানসিকতা নিয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় মানবাধিকার রক্ষা হয় না- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে মানবাধিকার কমিশন এবং এর অফিস ছাড়া কিছুই ছিল না। 

স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছিল উল্লেখ করে রিজওয়ানা আরও বলেনসে সময়  বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিষয়গুলো  বিকৃতভাবে প্রচার করা হতো। 

দেশে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ যাতে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সরকার দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করে চলেছে।

বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন উপদেষ্টা। 

প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক কবি সোহরাব হাসান বলেন, শুধু বই প্রকাশের জন্য কাউকে হত্যা করা হয়েছে এমন নজির সারা বিশ্বে নেই।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশে বই প্রকাশের কারণে একজন প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমরা এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা দেখতে চাই যেখানে মানুষ  ধর্ম, ক্ষমতা ও আদর্শের কারণ একে অপরকে আক্রমণ ও হত্যা করবে না।’

ঢাবি অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, এহসান এমন একটি সময়ে কলাম লিখেছেন যখন তৎকালীন সরকার দেশের গণমাধ্যমকে তাদের স্বার্থবিরোধী কোনো মতামত প্রকাশ না করতে বাধ্য করতো।

কিন্তু এহসান প্রমাণ করেছেন যে,শাসকদের অপচেষ্টা সব সময় সঠিকভাবে কাজ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাসকরা সবসময় মনে কওে, জনগণ তাদের কৌশল বুঝতে পারে না, কিন্তু বাস্তবতা হল জনগণ সবকিছু বুঝতে পারে এবং তারা একটি ছোট ফাঁক-ফোকরেরও সুযোগ নেয়।