বাসস
  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০৩

লেবাননে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজামের লাশ পেতে চায় পরিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৩ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : ইসরাইলি বিমান হামলায় লেবানন প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার নিজামের মৃত্যুর সংবাদ আসার পর থেকে পুরো পরিবারে চলছে শোকের মাতম। 

লেবাননে ১২ বছরের প্রবাস জীবনের পরিবারে আসেনি সচ্ছলতা। অবৈধভাবে প্রবাসে থাকায় নিজাম মায়ের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরও আসতে পারেননি দেশে। এবার তার দ্রুত দেশে ফেরার কথা ছিল। তবে তার আগেই প্রাণ দিতে হল প্রবাসী নিজামকে। শনিবার রাত ১০টার পর তার মৃত্যুর থবর পায় পরিবার।

জানা যায়, জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির ৫ সন্তানের মধ্যে নিজাম উদ্দিন চতুর্থ। অনটনের সংসারে নুন আনতেই পান্তা ফুরাত। 

স্থানীয় একটি বেকারিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করত নিজাম। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনতে ধারদেনা করে ২০১২ সালে লেবাননে পাড়ি জমান নিজাম উদ্দিন। তবে সেখানে গিয়ে নির্ধারিত কাজ না পাওয়ায় ভালো উপার্জন ছিল না তার। এছাড়া তার কাছে বৈধ কাগজপত্রও ছিল না। 

ফলে বাঁচার তাগিদে লুকিয়ে নির্মাণাধীন একটি ভবনে শ্রমিকের কাজ করতেন। লেবাননের বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় শনিবার (০২ নভেম্বর) লেবানন স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে নিজাম লেবাননের বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল হাজমিয়া এলাকায় কফি শপে যান। এসময় বিমান হামলায় মারা যান তিনি। 

এদিকে নিজামের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দ্রুত তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। নিজামের বড় ভাই জালাল উদ্দিন জানান, ভাইয়ের লাশ দেশে আনতে চাই। ভাইকে আমরা শেষবারের মতো দেখতে চাই। অনেক দিন ধরে ভাইকে দেখি না। 

নিজামের বড় বোন সায়েরা বেগম জানান, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় নিজাম দেশে ফিরতে পারেনি। তিনি আরও জানান ১২ বছরের প্রবাস জীবনে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে না পারলেও মায়ের থাকার জন্য একটি টিনের ঘর বানিয়েছিলেন। ঘর বানানোর ৬ মাস পরেই মারা যান তার মা। 

তিনি আরও জানান ২০১২ সালে নিজাম লেবানন যান। প্রথম তার আকামা ছিল। পরে আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা বেশি লাগায় নতুন করে করেননি। নিজামের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁর বোন পারুল বেগম। 

বিলাপ করতে করতে পারুল বলেন, শেষ মেষ গত শুক্রবার আমার ভাইয়ের লগে কথা হইছিল। ভাই বলছিল, আমার কোনো কাগজপত্র হয় নাই, বাড়িতে ক্যামনে আইমু। আমার জন্য কোনো চিন্তা ভাবনা কইর না। 

তিনি আরও জানান নিজামের এক বন্ধু শনিবার রাত ১০টা দিকে ফোন জানান, নিজাম মইরা গেছে। দ্রুত নিজামের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য রেহেনা বেগম বলেন, শনিবার রাতে ফোন করে জানানো হয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার পর নিজাম মারা গেছে। এখন তার পরিবার লাশের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারিভাবে যেন তার মরদেহ দেশে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।

এই ব্যাপারে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার জানান, ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।  বৈরুতের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই নিজামের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে অশা করা যায়।