বাসস
  ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:০৪

বগুড়ায় জমে উঠেছে শীতের পিঠার ব্যবসা

বগুড়া, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): জেলা শহরের পাড়া-মহল্লার রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমে উঠেছে শীতের মৌসুমী পিঠার ব্যবসা ।

শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় অনেকেই হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসেছেন। এটা মূলত মৌসুমী ব্যবসা। তবে এটা চলে প্রায় ৬ মাস। বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি পিঠা কেনা-বেচা করেন উদ্যোক্তারা।

গ্রামের চেয়ে শহরে এর প্রভাব বেশি। কারণ শহরের মানুষ তুলনামূলকভাবে খানিকটা ব্যস্ত। এ কারণে  পিঠা বানানোর সময় পান না তারা। কিন্তু মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠা এসব ভাসমান কিংবা খন্ডকালীন দোকান থেকে খুব  সহজেই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পারেন। 

বগুড়া শহরের সাতমাথা, সেউজগাজড়ী, খান্দার বাজার, বকশি বাজার, মফিজপাগলার মোগ, কলোনী, মাটিডালি, চারমাথাসহ একাধিক মোড়সহ প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে দেখা মিলবে শীতের পিঠার দোকান। 

ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানগুলোর প্রতিটিতেই সুস্বাদু পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ফলে দোকানীদের কেউ দিনে ৫ হাজার আবার কেউ ১০ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করতে পারছেন। 

রসুন-মরিচবাটা, ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি, কালোজিরা, সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ মিলিয়ে বিক্রি করা হয় চিতই পিঠা। সন্ধ্যায় হিমেল হাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানগুলোতে।

দোকানীরা বলছেন, চিতই, কুলি, ভাপা, ডিমচিতই, তেলের পিঠা ও পাটিসাপটা, ডিম-ঝাল পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা বিক্রি করেন তারা। এর মধ্যে ভাপা, চিতই আর ডিম-ঝাল পিঠার কদর বেশি। 

শহরের খান্দার বাজার থেকে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের দিকে ঢুকতেই পিঠার দোকান নিয়ে বসেছেন বেগুনী বেগম। ৩০ বছর ধরে  প্রতি বছর আশ্বিনের শুরু থেকে পিঠা বিক্রি শুরু করেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেন তার স্বামী ইদ্রিস ব্যাপারী। 

তাদের ব্যবসা চলে মধ্য ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। শুরুর দিকে স্বামী স্ত্রী দুইজন একটি মাত্র চুলো নিয়ে পিঠা বিক্রি শুরু করলেও এখন তাদের অন্তত ছয়টি চুলায় পিঠা তৈরি করছে।স্বামী স্ত্রী ছাড়াও কয়েকজন কর্মচারী রয়েছে পিঠার এ দোকানে। যাদের কেউ পিঠা বানানো আবার কেউ ক্রেতাদের পিঠা পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত। বেগুনি বেগমও পিঠা বানান। 

এখানে পিঠা খেতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রামের বাড়িতে আগে শীতের সময় ঘরে প্রায় প্রতিদিনই পিঠা বানানো হতো। সেই সময় আর নেই। এখন পিঠার স্বাদ পেতে হলে ফুটপাতই ভরসা। তবে এখানকার পিঠার স্বাদও ভালো। 

মারুফা আক্তার নামের এক গৃহীনি জানান, আমরা প্রায়ই এখানে পিঠা খাই এবং পরিবারের জন্য বাসায় পিঠা নিয়ে যাই। কর্মব্যস্ততার কারণে চাল ভেঙে আটা করে পিঠা বানানোর সময় সুযোগ আর হয় না। ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প দামে হাতের নাগালেই এখন পিঠা পাই। 

শহরে পিঠার দোকানে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা দাম পর্যন্ত পিঠা রয়েছে। তবে কুশলি এবং ডিম চাপড়ি পিঠা বেশি বিক্রি হয়। কারও কারও দোকানে প্রতিদিন ২ মণ আটার পিঠা তৈরি হয়। দিনে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পিঠা। বেশিরভাগই মৌসুমী ব্যবসা হিসেবেই পিঠা বিক্রি করে থাকেন। শীতের কয়েক মাস চলে পিঠার ব্যবসা।

তারপর কেউ কেউ অন্য কাজে জড়িয়ে পড়েন। কেউ চলে যান গ্রামে পরিবারের কাছে। তাদের মধ্যে অন্যতম বেগুনি বেগম। 

তিনি জানান, অনেকেই এ শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রিকে বেছে নিয়েছেন মৌসুমী পেশা হিসেবে। বেচা-কেনাও বেশ ভালোই চলে। এ টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলে। দিন দিন তাদের ব্যবসা বড় হচ্ছে। রাতের বেলায় মানুষজন লাইন ধরে পিঠার জন্য অপেক্ষা করেন।