শিরোনাম
ঢাকা, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): কবি, দার্শনিক ও মানবাধিকার কর্মী ফরহাদ মজহার বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পাওয়া জনগণের অধিকার, ন্যাচারাল রাইটস, এটা তার জন্মসূত্রে পাওয়া অধিকার। আর এ অধিকার সাংবাবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
আজ সোমবার রাজধানীর খিলক্ষেতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ রূপান্তর কোন পথে?’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আরইবি’র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশিষ্ট কলামিস্ট, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস এর সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিম এর সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহাম্মদ।
কবি ফরহাদ মজহার বলেন, এখন দেশে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় নেই। তাই সকল কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের জ্বালানির ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর জনগণের জন্য একটি জনবান্ধব জ্বালানি নীতি করতে হবে। শহর ও গ্রামে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘ন্যাশনাল ফান্ড অব পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট’ এর মাধ্যমে কাজ করার কথাও বলেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং প্রত্যেক জায়গায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতের গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকার পেয়েছি। দীর্ঘ ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কোন প্রতিষ্ঠানই ঠিক রাখেনি। সেই গণঅভ্যুত্থানের জায়গা থেকে আমরা আমাদের জাতীয় সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করব এবং এর একটা সমাধান তৈরী করার জন্য কিছুটা নীতিগত আলোচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতকে প্রাধান্য দেয়া বন্ধ করতে হবে। নিউ লেবেল ইকোনোমিক পলিসি জনগণের জন্য ক্ষতিকারক, এটা ছুঁড়ে ফেলতে হবে। এ ধরনের পলিসি আমলারা তৈরী করে। তিনি বলেন, জনগণই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। আমরা যদি এখনো ধরে নেই, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে রয়েছি, এটা আমাদের জন্য ভুল হবে। আমাদের ছাত্ররা এখনো আন্দোলন করছে। তবে আমরা যেটা করতে চেয়েছি সেটা এখনো করতে পারিনি। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে আন্দোলন এখনো চলছে, আমাদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র এবং আমাদের সৈনিকরা যে আন্দোলন করছে তা চলমান।
‘আমাদের জনগণের জন্য এই বিদ্যুতের সুরক্ষা দিতে হবে। বাংলাদেশের জন্য যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমাদের বের করতে হবে এবং এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ এবং আরইবি এর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব দেখতে পাচ্ছি সেটা নিরসন করতে হবে। এজন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, জনকল্যাণমূলক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
আমরা দেশকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য নতুন সংবিধান করতে যাচ্ছি, আমরা এই খাতেও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়ন করব’’ উল্লেখ করেন ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ এর যারা বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন তাদের বিভিন্ন ক্ষোভ রয়েছে। তারা আমার হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেছেন, আমি তাদেরকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলতে চাই যে, বর্তমানে আরইবির যিনি চেয়ারম্যান রয়েছেন তিনি তাদের এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে অবগত আছেন। তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এটা নিয়ে বিরোধের কিছু নেই। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যখনই আমরা দাঁড়াই, বিশৃংখলা করি, এটা হয় অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ড।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক কিছু বোঝার চেষ্টা করছি। বর্তমানে সরকারের যে পরিস্থিতি তাতে দেশে এবং দেশের বাইরেও অনেক চাপ রয়েছে, নানা রকম উস্কানি দিচ্ছে, আমরা তাদেরকে বলবো আপনারা অত্যন্ত সুন্দরভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন।
আলোচক হিসেবে এম শামসুল আলম বর্তমান সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, জনগণের জ্বালানি ভাগ্য অবহেলার শিকার হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্য।
জ্বালানি খাতের মূল্য নির্ধারণে জনগণের সম্পৃক্ততার প্রয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ কেন সরকার করবে? পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তার উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-২০১০ থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি, অনুসন্ধান বা উৎপাদন, সঞ্চালন বা পরিবহন ও বিতরণে প্রকৃত খরচ এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা, কষ্ট প্লাস নয়, কষ্টবিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পরিচালনা ও উন্নয়ন নীতির ভিত্তিতে সরকারি সেবা খাত হিসেবে এ খাতের সংস্কার, পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহসহ সকল এনার্জির সকল পর্যায়ের ব্যয়হার ও মূল্যহার গণশুনানির ভিত্তিতে বিইআরসি নির্ধারণ এবং ২০১২ সাল থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত আটকে রাখা ৩টি প্রবিধান কোনরকম পরিবর্তন না করে অবিলম্বে গেজেট প্রকাশ, বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং সরকারি কোম্পানি বা সংস্থাসমূহের চেয়ারম্যান, সদস্য ও শীর্ষ পদসমূহে নিয়োগ প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে করার লক্ষ্যে এক বা একাধিক প্রবিধান প্রণয়ন ও বিইআরসি আইন সংস্কার, মেগা নয়, ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শিল্প, কর্মসংস্থান ও দেশীয় উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বটোম আপ এপ্রোচ-এ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উন্নয়ন এবং সেই সাথে বিদ্যমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ ও বিইআরসি আইন ২০০৩ এর আওতায় জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা।