শিরোনাম
ঢাকা, ১২ নভেম্বর, ২০২৪(বাসস): জনবান্ধব বিচার ব্যবস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক কৌশলপত্র প্রণয়নে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ব্যাংককে অনুষ্ঠিত একটি রিজিওনাল কনফারেন্সে কী-নোট স্পিকার হিসেবে গতকাল বক্তৃতা করেন। ইউএনডিপি, থাইল্যান্ড ইনস্টিটিউট অব জাস্টিস, ইউএনইপি, আইডিএলও, ইউনেস্কো সহ কয়েকটি সংগঠনের যৌথ উদোগে আয়োজিত এই রিজিওনাল কনফারেন্সে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, একটি গণমুখী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে বাংলাদেশের জনগণের পরম অভিপ্রায় জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত গণবিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন,এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি দেশের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকা কতটা জরুরি তা পুনরায় উঠে এসেছে।
তিনি বলেন,এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে কলোনিয়াল লিগ্যাসি হিসেবে যে আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে অনেক সময়ই তা গণপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। তারই সূত্র ধরে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের শত বছরের প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আধুনিক যুগে বর্তমান প্রেক্ষাপট নতুন করে বিবেচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ বদ্ধ পরিকর। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি তৃণমূল পর্যায়ে আইনি প্রতিকার তথা কমিউনিটি জাস্টিস নিশ্চিতে বাংলাদেশের গ্রাম আদালতসমূহের সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের মাধ্যমে নাগরিকগণের আইনি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সদস্যগণ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে বিচার সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে মর্মে প্রধান বিচারপতি কনফারেন্সে প্রতিনিধিদেরকে অবহিত করেন।
প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ক্যাপাসিটি এপ্রোচ প্রয়োগ করে কেবলমাত্র অস্বচ্ছল ব্যক্তি লিগ্যাল এইডের সহায়তা পাবেন এই সংকীর্ণ ধারণাকে আরও বিস্তৃত করেছে। ফলে বর্তমানে অর্থিক অসঙ্গতি ছাড়াও অন্য যে কোন প্রতিকূলতার কারণে কোনো ব্যক্তি আইনজীবী নিয়োগে ব্যর্থ হলে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন,বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন জনস্বার্থ মামলায় জুডিসিয়াল রিভিউ’র সফল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আইনের উদারনৈতিক ব্যাখা প্রদান করে সমাজের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। এভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচার বিভাগ সংস্কারে তার ঘোষিত রোডম্যাপের রূপরেখা তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে সরকারের নিকট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ হতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল’কে পুনরুজ্জীবিত করেছে। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রক্রিয়া চালু করার বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
প্রধান বিচারপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বিচার বিভাগের আধুনিকীকরণ তথা বিচার ব্যবস্থায় বিচারপ্রার্থীর অভিগম্যতা বৃদ্ধিসহ বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়নে ই-জুডিসিয়ারি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।