শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : চট্টগ্রামবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিতের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি ও হেলদি সিটি করতে চাই।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) নগরীর চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে এ ঘোষণা দেন মেয়র। এদিন চকবাজার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেন এবং স্থানীয়দের কাছে তাদের কাজের পারফরম্যান্স জানতে চান।
মেয়র বলেন- আমি এসি রুমে বসে থাকার জন্য আসিনি। রাস্তায় কাজ করার জন্য এবং জনগণের পাশে থাকার জন্য এসেছি। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীদের আমি বলছি নগরপিতা নই, নগরসেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়।
এরপর মেয়র চকবাজার এবং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়কের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি এসময় মেয়র ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ করেন।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর আমি বেশি জোর দিচ্ছি। চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি এবং হেলদি সিটি করতে চাই আমি। গত সরকারের আমলে প্রতিটি কাউন্সিলর প্রতিটি ওয়ার্ডে একেক ওয়ার্ড থেকে ৬০ থেকে ৯০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী রেখেছে তারা ঠিকমত জনগণের কাজ করছে কিনা, সেটা সরাসরি তাদের কাছ থেকে জানার জন্য আমি হাজিরা নিচ্ছি। আমি জনগণকে জিজ্ঞেস করছি তাদেরকে দেখা গিয়েছিল কিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানে। কারণ তাদের কাজটাই হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং ওই জন্য কর্পোরেশন থেকে তারা একেকজন প্রায় ১৪-১৬ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার যে মূল লক্ষ্য সেটা বাস্তবায়ন করছে কিনা তা দেখার জন্য প্রতিটা ওয়ার্ডে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, অলরেডি আমি পূর্ব ও পশ্চিম বাকলিয়া গিয়েছি, আজকে চকবাজার ওয়ার্ডে এসেছি, এভাবে প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি এবং আমি গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনগণ যাতে ময়লা আবর্জনা রাস্তায় না ফেলে, নালার মধ্যে না ফেলে, বরং ডাস্টবিনে ফেলে এই গণসচেতনতা বৃদ্ধি করছি।
চসিক মেয়র বলেন, যে জায়গায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আপনাদের সেবা দিচ্ছেন না, আপনারা আমাদের জানাবেন, ব্যবস্থা নেবো। ইনশাআল্লাহ জনগণের যেকোনো সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আপনারা জানেন ইতিমধ্যে ডেঙ্গুর জন্য প্রথমদিন থেকে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খোলা হয়েছে। যেখানে ডেঙ্গুর যে টেস্ট সেটি বিনামূল্যে করে দিচ্ছি। আমরা ওইখানে ১০টি বেড রেখেছি। যেকোনো সময় মুমূর্ষু রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবে।
দূর্নীতি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে যাচ্ছি। ওয়ার্ডে যাওয়ার পরে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির চিত্র দেখতে পাচ্ছি। আপনারা দেখেছেন আমি যখন শুলকবহর ওয়ার্ডের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে দেখলাম ২৫টা দোকান থেকে অলরেডি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে এবং সেখানে সিটি কর্পোরেশন পুরা এক বছরে পেতো মাত্র ১ লাখ টাকা। অথচ সেখানে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা প্রতিবছর আয় করার কথা ছিলো। কাজেই এই যে একটা দুর্নীতি মেয়র এবং কাউন্সিলররা মিলে করেছে আমি একে-একে সব দেখতে পাচ্ছি। কাজেই আমি মনে করি শুধু একটা ওয়ার্ডে নয় প্রতিটি ওয়ার্ডে মেয়র এবং কাউন্সিলররা মিলে দুর্নীতি করেছে, এটার শ্বেতপত্র বের হওয়া উচিত, জনগণের সেটা জানা উচিৎ এবং জনগণই বিচার করবে দুর্নীতির জন্য তাদের কি শাস্তি পাওয়া উচিত।
নগরবাসীর সহায়তা চেয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, একটা জিনিস মনে রাখবেন, হাজার-হাজার কোটি টাকা জলাবদ্ধতা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং মশা মারার জন্য খরচ করে জনগণকে সচেতন করতে না পারি তখন এই নগরকে আপনি সুন্দর রাখতে পারবেন না। এজন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। এ শহর আমার-আপনার সবার। ময়লা যথাস্থানে ফেলুন। প্রতি তিনদিনে ঘরে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি ফেলে দিন। আসুন সবাই মিলে ডেঙ্গুর আতঙ্কমুক্ত থাকি।
চসিক মেয়র বলেন, আমরা মস্কুবান নামের একটি ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করছি মশা মারতে। এছাড়া উন্নত দেশগুলোতেও খোঁজ নিচ্ছি মশা মারার ভাল ওষুধের জন্য। বর্তমানে যেসব ওষুধ আমাদের সংগ্রহে আছে সেগুলোর মানও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরীসহ পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।