শিরোনাম
॥ আল-আমিন শাহরিয়ার ॥
ভোলা, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ভোলার চরাঞ্চলের শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রান্তিক এসব এলাকার শিশুরা বিভিন্ন রোগ,মহামারী,দুর্ঘটনা,পুষ্টিহীনতাসহ নানা ধরনের সমস্যার শিকার হচ্ছেন। শিশুরা ঠিকমত বিকশিত হতে পারছে না। তাদের পড়ালেখায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
সরেজমিনে ভোলা সদরের মেঘনা তীরবর্তী মাঝের চরে গিয়ে কথা হয়,সেখানকার গৃহিণী রাবেয়া বেগমের সঙ্গে তিনি বলেন,৪ বছর বয়সী শিশু জামাল জম্মের পর থেকেই বেড়ে উঠছেনা। জ্বর,সর্দি,আমাশয় আক্রান্ত থাকে সবসময়। গরম আসলে দেহে ফোঁসকা উঠে। ডাক্তার দেখালেও রোগ নির্ণয় হয়না। শিশুকে নিয়ে এমন অসহ্য যন্ত্রনায় দিন কাটছে তার।
অপর গৃহিনী আরজু বেগম জানান,তার সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েটির হাত-ফেটে সব সময়ই রক্ত ঝড়ে। বহু ওষুধ খাইয়েও,রোগ সারছেনা। একই দুর্গম চরের কিশোরী নার্গিস বলেন,১৫ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয়েছে। এখন তার বয়স সতের। অল্প বয়সে পুত্র সন্তানের মা তিনি। আটমাস বয়সী শিশু রহিমে'র কাশি আর জ্বর প্রকট আকার ধারন করেছে। সপ্তাহে দু'একবার উত্তাল নদী পেরিয়ে সদর হাসপাতালে নিতে হয় শিশু রহিম'কে। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে নিজেও রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বামী অজিউল্যাহ'র রোজগারের অভাবে চিকিৎসা চলেনা তার। দিনদিন শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কালিমুল্লাহ বলেন, মাঝের চরে মা ও সন্তান দু'জনেই শিশু; এমন বহু পরিবারেই শিশুর কোলে শিশু পালনের দৃশ্য অহরহ। এ চরজনপদে এমন অসংখ্য রাবেয়া,আরজু আর কিশোরী নার্গিসদের শিশুসন্তানের জীবন কেটে যায় ঋতুবদলের নির্মম যাতাকলে। অজ্ঞাত বহু নিত্য-নতুন রোগের শিকার এখানকার শিশুরা সঠিক চিকিৎসার অভাবে জীবন সংকটের শিকার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সেখানকার স্বাস্থ্য সহকারী মো: আলাউদ্দিনের সঙ্গে তিনি জানান,মাঝের চরের শিশুরা বেশীরভাগ সময় বর্ষা মৌসুমেই পানিবাহিত নানা রোগের শিকার হচ্ছে। চরের এসব শিশুদের ব্যাপারে অতীতের চেয়ে বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগ খুবই যত্নশীল।
জেলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের করুন চিত্র। ওই চরে গিয়ে কথা হয় মৎস্যজীবী আব্দুল্লাহ মাঝির সঙ্গে তিনি বলেন, সোলেমান নামের তার দুইবছর বয়সী শিশুটি এখনো সঠিক করে হাটতে পারেনা। শরীরের নিম্মাংশ বিবর্ণ,উপরাংশ ফ্যাকাশে।রোগ নির্ণয় করতে না পারায় ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেননা। তাই শিশুটিকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। সেখানকার সাবেক ইউপি সদস্য হেলালউদ্দিন জানান,জম্মের পর থেকে মদনপুর চরের শিশুরা রোগাক্রান্ত আর অপুষ্টির শিকার হয়ে অচেনা রোগের ঘাণি টানছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই এসব হচ্ছে বলে ধারনা এ জনপ্রতিধির ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কোনো কক্ষেই তিলধরার ঠাই নেই। শূণ্য বয়স থেকে শুরু করে ১১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরাই এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ আছে। এসব শিশুদের অধিকাংশই নিত্য-নতুন রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে চরজনপদের মতো প্রান্তিক এলাকার শিশুরা বিভিন্ন রোগ,মহামারী,দুর্ঘটনাসহ নানাভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপকুলের পরিবারের নারীরা তাদের শিশুদের নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে খাদ্য প্রস্তুত,জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে। চরাঞ্চলের অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেনা। এছাড়াও জীবন-জীবিকা হুমকীর মুখে পড়ে অনেক পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। অনেকেই নদী ভাঙ্গনসহ নানা কারনে এ জনপদ ছেড়ে অন্য জনপদে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মো: মনিরুল ইসলাম বাসস'কে বলেন,উপকুলীয় জেলা ভোলার শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগের পাশাপাশি বহুমাত্রিক রোগে আক্রান্ত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শিশুরা অতীতে যেসব অজানা রোগে আক্রান্ত হতো তা তাৎক্ষণিক জানা করা কষ্টকর হতো কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা সেবা আধুনিকায়ন হওয়ায় পূর্বের সেই প্রতিবন্ধতা অনেকটাই কেটে গেছে। এখনকার উন্নত বিশ্বায়ন উপকূলের শিশুর সব রোগই নিরাময়যোগ্য বলে তিনি দাবি করেন।