বাসস
  ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২১

একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের দলাদলি করা উচিৎ নয় : মেয়র শাহাদাত

ফাইল ছবি

 চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ (বাসস) : একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের দলাদলি করা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সামনে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করার ঘোষণা দেন মেয়র।   

আজ সোমবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা বিভাগের সাথে মত বিনিময় সভায় মেয়র বলেন, শিক্ষকরা আজকের সভায় দলাদলির যে অভিযোগটি করেছেন তা হতাশাজনক। একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের দলাদলি করা উচিৎ নয়। যে কারো যে কোন মতাদর্শে বিশ্বাস থাকতে পারে, কিন্তু সেটা অফিস টাইমের বাহিরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে চর্চা করা উচিৎ।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি, দল করি। কিন্তু আমি এও মনে করি, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে। আর যখন আমি একটা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবো সেখানে রাজনীতি টেনে আনবো না। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কোনো অন্যায় করবো না। এ জন্য চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের আমি আসতে বারণ করি। অথচ আমিই সন্ধা হলে দলীয় কার্যক্রমে যাই। ঠিক একইভাবে এখানে যারা এসব দলবাজি করবে তাদেরকে আমি বরদাশত করবো না।’

রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ফাঁকি দেয়া মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে মেয়র বলেন, ছাত্ররা যাতে ঠিকমত পড়াশোনা করে, ঠিকমত যাতে তারা ক্লাসে আসে, কোন ছাত্র ক্লাস যাতে ফাঁকি না দেয়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যে টাইমিং আছে সে টাইমিং-এ যাতে সবাই একাডেমিক কার্যক্রমে থাকে তা নিশ্চিতে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো শিক্ষক বাড়ির পাশে পোস্টিং থাকায় ক্লাসের ফাঁকে বাসায় চলে যাবেন এমন যেন না হয়। প্রধান শিক্ষককে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশলে, বিভিন্ন প্রেসার দিয়ে চলে গেলে এ ধরনের কোনো উদাহরণ যদি থাকে, এ ধরনের ফাঁকিবাজ কোনো শিক্ষক যদি থাকেন বা কোনো প্রধান শিক্ষকের ওপর হুমকি দেন কিংবা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হন প্লিজ লিস্ট দেবেন। তিনি যত বড়ই শক্তিশালী হোন না কেন শাস্তি হবে। 

শাহাদাত বলেন, ছাত্রদের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। আমরা দেখেছি তারা রাস্তাঘাটে ট্রাফিক বিভাগের কাজ করেছে। তারা তো আন্দোলন করেছেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিয়েছে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করেছে। কাজেই আমরা তাদেরকে দিয়ে অনেক ভাল কাজ করাতে পারি। বাবার পরে যদি কোনো ছাত্র কাউকে মান্য করে সেটা হচ্ছেন শিক্ষক। আমরা যখন দেখি যে একজন শিক্ষককে একটা ছাত্র অপমান করছে, ভালো লাগে না। যখন আবার এই জিনিসগুলো খুব ডিটেইলসে যাই, কেন একটা ছাত্র শিক্ষককে অপমান করবে, কেন এই ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলবে ? শেষে দেখা যায়, চরম অসঙ্গতি। হয়তো বা সেখানে অনেক করাপশনের ব্যাপার চলে আসছে। হয়তো বা কারো সাথে অসদাচরণ। হয়তো বা এমন এমন কিছু কথাবার্তা চলে আসে যেগুলো আমি এখানে বলতে চাইছি না। কাজেই এই বিষয়গুলোতে আমাদের শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে হবে। 

নৈতিক শিক্ষার ওপর জোরারোপ করে মেয়র বলেন, আমরা নৈতিক শিক্ষার ওপর কিন্তু অতটা জোর দিচ্ছি না। একজন মানুষ একজন ভালো ডাক্তার হতে পারে পড়াশোনা করে। কিন্তু ভালো ডাক্তার হয়ে যদি আমি বিনামূল্যে একটা গরীব রোগীকে চিকিৎসা না করি সেক্ষেত্রে আমার ভালো ডাক্তারের আর কোন মূল্য থাকে না। ঠিক তেমনি প্রতিটি প্রফেশনে আমি যদি মানবতা দেখাতে না পারি, তাহলে কিন্তু সেটার দাম থাকে না। এই শিক্ষাটাই আপনারা দিতে চেষ্টা করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা মানুষের মত মানুষ হতে পারে।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তারসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।