শিরোনাম
মো. আয়নাল হক
রাজশাহী, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে গভীর সেচ নলকূপ পরিচালনার বিষয়ে খুবই আশাবাদী। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধীনে ১৬টি জেলার সমন্বয়ে দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এযাবত কালের বৃহত্তম সেচ প্রদানকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা-বিএমডিএ’র লক্ষ্য হচ্ছে সেচ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা।
বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সম্প্রতি তার কার্যালয়ে বাসস’র সাথে আলাপকালে বলেন, “আমরা দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের সাথে অ্যাপের ইনস্টলেশন ও প্রচারের বিষয়ে কথা বলছি এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা যদি অ্যাপসগুলো ব্যবহারে সফলভাবে উৎসাহিত করতে পারি, তবে কৃষকরা খালি থাকা সাপেক্ষে যে কোনো জায়গা থেকে, যে কোনো সময় তাদের নিজ নিজ সেচ সুবিধা পেতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, গভীর নলকূপের ম্যানুয়াল অপারেশন নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে রাতারাতি সমস্যার সমাধান দেওয়া সম্ভব না হোলেও উদ্ভুত পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সময় এসেছে। মাঠে তৃণমূল কৃষকদের অনেকেই পাম্প অপারেটরদের কর্মক্ষমতার ওপর বিরক্ত, তবে সেচ ব্যবস্থা কার্যকর করার ক্ষেত্রে তারাই মূল হোতা।
ড. আসাদ বলেন, বর্তমানে এই অঞ্চলে প্রয়োজনভিত্তিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রচারের ফলে সেচের প্রসারে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১২.৩৫ লাখ টন ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুনঃসক্রিয়করণ, পরিত্যক্ত খাল ও পুকুর পুনঃখনন, সাবমার্সিবল খাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ এবং ক্রস ড্যাম, রাবার ড্যাম ও সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও নদীতে পন্টুন স্থাপন এবং নদী ও খালে লো লিফট পাম্প, সেচের গভীর নলকূপে প্রিপেইড মিটার, সেচের গভীর নলকূপ থেকে পানীয় জল সরবরাহ এবং সৌরবিদ্যুৎ চালিত কূপ খনন ও সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প চালু হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও সৌর শক্তি উভয়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত, ১৫,৮২০টি গভীর নলকূপ ও ৯৬৬টি লো লিফট বা পুনরায় সক্রিয় করা পাম্প চালু হয়েছে, যা প্রায় ১০.৩৬ লাখ হেক্টর জমিকে নিয়ন্ত্রিত সেচের আওতায় এনেছে এবং একই সঙ্গে দুই ফসলা থেকে তিন ফসলা জমিতে রূপান্তর করেছে।
পূর্বের মাটির খালের পরিবর্তে, প্রতিটি নলকূপের সংশ্লিষ্ট এলাকা আরও ১,৪০৪ কিলোমিটার প্রসারিত করার পাশাপাশি ১৫,৮৯৫ কিলোমিটার নতুন কংক্রিটাইজড সাবমারসিবল খাল খনন করা হয়।
উন্নয়ন কাজের ফলে ৫৭০ হেক্টর চাষের জমি এবং পানির অপচয় সুরক্ষিত হয়। ১২,০৩১ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়েছে, যার ফলে প্রতি বছর ৮৯,০০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে ৩.৪ লক্ষ টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।
এমবিডিএ ২,৫২৭ কিলোমিটার পরিত্যক্ত খাল এবং ৪,২৫৭টি পুকুর পুনঃখনন করেছে, যা ভূপৃষ্ঠের জলের সাথে ৫২,৫০০ হেক্টর জমিকে সম্পূরক সেচের আওতায় আনার মাধ্যমে বছরে প্রায় ২.১৫ লাখ টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করেছে।
পুনঃখনন করা খাল ও পুকুর থেকে পানি সরবরাহের পাশাপাশি সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের পর এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
নদীতে ১১টি পন্টুন এবং নদী ও খালে ৭৪৫টি লো-লিফ্ট পাম্প স্থাপন করে ভূপৃষ্ঠের জল সহ প্রায় ২০,৭০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়।
খরা-প্রবণ উচ্চ বরেন্দ্র অঞ্চলে যেখানে বিদ্যমান অগভীর ও গভীর নলকূপগুলো বিভিন্ন কারণে এখনো পৌঁছাতে পারেনি, সেখানে প্রায় ২০হাজার পরিবার খননকৃত নিরাপদ পানীয় জল পাচ্ছে। গ্রামবাসীরা কেবল পানীয় ও অন্যান্য গৃহস্থালির জন্য জল ব্যবহার করছে না বরং ভূ-পৃষ্ঠের জলের সর্বোত্তম ব্যবহারের পরে বিভিন্ন রকমের সেচ সাশ্রয়ী শস্য এবং শাকসবজি চাষ করছে।
৬৪০টি খনন কূপ পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় ৯৫০ হেক্টর জমি সবজি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। ২,২৫০ টিরও বেশি কৃষককে নরম সেচ ব্যবহার এবং প্রচারের পাশাপাশি পাম্পগুলি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত, ১৯৭টি গ্রামের ১,৩৫০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার পাশাপাশি ৩৩,৭৫০ জন মানুষকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহের আওতায় এনে সমান সংখ্যক সৌরবিদ্যুতের প্যানেল সহ ৬৪০টি খনন কূপ স্থাপন করা হয়েছে। সেই সব খনন কূপ থেকে পানি আনতে সোলার পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফলস্বরূপ, কৃষক পরিবারগুলি জল বিতরণ স্থাপনা এবং ১.৫ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইনের মাধ্যমে সহজে সেচ ও গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য জল পাচ্ছে।
সৌর প্যানেলগুলো পাম্প হাউস এলাকায় আলো জ্বালানোর জন্য এবং বৃষ্টির জল সংগ্রহের জন্য ফানেল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভূগর্ভস্থ জলের স্তরকেও রিচার্জ করছে।