শিরোনাম
বরগুনা, ২০ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ জেলেদের স্মরণে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থাপন করা হয়েছে জেলেদের নামসহ একটি স্মৃতিফলক।
জেলার পাথরঘাটা এলাকার কমপক্ষে ১৮৮ জন জেলে গত ৩০ বছরে সাগরে নিখোঁজ হয়েছেন। এ উপজেলাটি সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস পাথরঘাটায় প্রথমে আঘাত হানে। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নিখোঁজ জেলেদের পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯১ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন ২০০৭ সালের সিডরে। এছাড়াও ১৯৯৩ সালে ৫ জন, ১৯৯৪ সালে ২ জন, ২০০১ সালে ৫ জন, ২০০৬ সালে ১৪ জন, ২০১৪ সালে ৭ জন, ২০১৮ সালে ১৩ জন সর্বশেষ ২০২৩ সালে ১৫ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল পাথরঘাটার অধিকাংশ মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারের জন্য নদী ও গভীর সাগরে যায় জেলেরা। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় যে কোনো বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস পাথরঘাটায় প্রথমে আঘাত হানে। এতে প্রতি বছরই জেলেরা নিখোঁজ হন। এসব দুর্যোগে ১৯৯৩ সাল থেকে গত ৩০ বছরে শুধু এই উপজেলায় নিখোঁজ হয়েছেন ১৮৮ জন জেলে। এর আগের সংখ্যাতথ্য তাদের কাছে নেই।
কয়েকটি জেলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একদিকে নিখোঁজের সন্ধান নেই অন্যদিকে পরিবারে আর্থিক দুরবস্থায় আছেন তারা। নিখোঁজদের ‘মৃত্যু সনদ’ না থাকায় তারা প্রয়োজনে জমি-জমাও বিক্রি করতে পারেন না। নিখোঁজ জেলেদের স্ত্রীরা পাচ্ছেন না সরকারি সহায়তা অথবা বিধবা ভাতা।
উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন জানান, দেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান প্রশংসনীয়। এতো অবদান সত্বেও উপকূলের জেলেদের নিয়ে কেউ ভাবছেন না। উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, উপকূলের সম্পদ, জলবায়ু, পরিবেশসহ জেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড এবং উপকূল মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানাচ্ছি।
পাথরঘাটা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক জানান, যেসব জেলে নিখোঁজের ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে সেসব জেলে পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান খান জানিয়েছেন, উপকূলের জীবন-জীবিকা, জেলেদের নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। জেলে পরিবার হারাচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। নিখোঁজ জেলেদের নামসহ উপজেলা পরিষদের মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়েছে।
এসব নিখোঁজ জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি সহায়তাসহ তাদের প্রয়োজনে জমিজমা বিক্রিতে সহায়তার লক্ষে একটি প্রত্যয়ন দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ পরিবারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।