বাসস
  ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৩
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৯

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যার হুমকির অভিযোগ- থানায় জিডি

ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) হত্যার হুমকির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন ওই শিক্ষক। একই সাথে পার্শ্ববর্তী কোতয়ালী থানাতেও জিডি করেন তিনি।

উপাচার্যকে দেয়া আবেদনে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেন, গণঅভুত্থ্যানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকুরী বিধি অমান্য করে দেশ থেকে পলায়ন করে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করছে কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লা। বিদেশে অবস্থান করে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।

ওই শিক্ষক জানায়, সে (সালাউদ্দিন মোল্লা) অভিযোগ করে আমি (জাহিদুল হক), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা শিক্ষা কেন্দ্রের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরকে পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দিয়েছি। সে (সালাউদ্দিন মোল্লা) নিজেকে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী লোক বলে পরিচয় দেয় এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করে।

শিক্ষক জাহিদুল হক জানান, মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও হমকি প্রদান, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজী, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পে লুটপাট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের হেনস্তা ও নির্যাতনের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীরা তার বরখাস্তের দাবী করে আসছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া কমিটির একজন সদস্য হিসেবে গত ১২ নভেম্বর ‘জগন্নাথ  বিশ্ববিদালয় সপ্তম আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০২৪’ চলাকালে আমি খেলা পরিদর্শনে যাই এবং ধূপখোলা মাঠে মোঃ আব্দুল কাদেরকে পুষ্পেন সরকারসহ (ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর, শরীরচর্চা শিক্ষা কেন্দ্র) বেশ কয়েকজন স্টাফের সাথে বসে থাকতে দেখি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া কমিটি ও বিভিন্ন ক্রীড়া উপ-কমিটির কোন কার্যক্রমেই তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি।

তারপরও মাঠে তার উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করলে তারা আমাকে বিষয়টি অবগত করে যেহেতু আমি একই সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য (সহকারী প্রক্টর)। আমি বিষয়টি বর্তমান প্রক্টর ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হককে ফোনে অবগত করি। তিনি কোন ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে মোঃ আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরকে মাঠ ত্যাগ করতে বলার জন্য আমাকে পরামর্শ দেন। আমি প্রক্টরের নির্দেশমত মোঃ আব্দুল কাদেরের কাছে গিয়ে দেখি সে ইতিমধ্যে চলে গেছে এবং যেখানে পুষ্পেন সরকার বসে আছে। তখন আমি তাকেই প্রক্টরের নির্দেশনা জানিয়ে দিই এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলি।

ওই শিক্ষক বলেন, উল্লেখিত ঘটনা বিদেশ পলাতক সালাউদ্দিন মোল্লার কাছে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ানোর পিছনে মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির, পুষ্পেন সরকার এবং সেই সাথে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ময়নাল হক ও উপ-পরিচালক গৌতম কুমার দাস দায়ী।

অভিযোগপত্রে শিক্ষক জাহিদুল হক উল্লেখ করেন, হুমকিদাতা সালাউদ্দিন মোল্লা বিদেশে অবস্থান করায় ক্যাম্পাসের ঘটনা তার কাছে কেউ রিপোর্ট না করলে জানার কোন উপায় নেই, তাছাড়া হুমকিদাতা আমার পূর্ব পরিচিত নয় এবং তার সাথে আমার পূর্বে কোনো ব্যক্তিগত বিরোধও নেই। সে মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরের হয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক সহকারি প্রক্টর জাহিদুল হক বলেন, হুমকিদাতা কর্মকর্তার সাথে আমার আগে কখনো যোগাযোগ ছিলো না। চিনিও না। হঠাৎ করেই সে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অবশ্যই তাকে কাজী মনির জানিয়েছে। তার সাথে আমার কোন পার্সোনাল সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিলো না। আমি থানাতেও জিডি করেছি।

তিনি বলেন, সালাউদ্দিন মোল্লা ও মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরসহ অভিযুক্তদের বিষয়ে পূর্বেও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। তারা অত্যন্ত দুঃর্ধর্ষ প্রকৃতির এবং বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তারা যেকোন সময় আমার শারিরীক বা মানসিক ক্ষতি করতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।

এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, সালাউদ্দিন মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও সহকারি প্রক্টর জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, অভিযুক্ত সালাউদ্দিন মোল্লা বেআইনিভাবে বিদেশে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা বা চাকুরীবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বাসসকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক সহকারি প্রক্টর জাহিদুল হক স্যারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।’

জানা যায়, সরকার পতনের পর দেশ ছাড়েন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লা। তিনি সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির রাজনীতি করতেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হওয়াতে দীপু মনির সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সম্প্রতি দেশের বাইরে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ সমালোচনা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।