বাসস
  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪১

ঐক্যবদ্ধ হয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে হবে: রেহমান সোবহান

ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শক্তভাবে দাবি তুলে ধরতে হবে। 

তিনি বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ সব দেশেই আছে, তারাও তাদের আন্দোলন করে। কিন্তু এতো এতো মাত্রার বঞ্চনার শিকার হয়েও এখানে উপস্থিত প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শক্তিশালী নয়। সবাইকে এক হয়ে কন্ঠ তুলতে হবে, শক্তভাবে দাবি তুলে ধরতে হবে। এছাড়া আর কোনও সমাধান নেই।’

আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে অংশীদারিত্ব উদযাপন এবং প্রকাশনা উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী নিয়ে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) আটটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এই অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র তুলে ধরে জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধেদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য আলাদা কমিশন না করা হলেও পথ এখানেই শেষ নয়। আপনারা নিজেরা সম্মিলিতভাবে একটি নাগরিক প্লটফর্ম গঠন করেন, আপনাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। আশা করি প্রধান উপদেষ্টা আপনাদের কথা অবশ্যই শুনবেন।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেড’র পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি জানান, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম থেকে একজন বিধবা মাসে ৫৫০ টাকা পান। এই সামান্য ভাতা দিয়ে তিনি কী করতে পারেন। অনেক বিধবাকে ভিক্ষা করেই খেতে হয়।  

সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মজুরি বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্য, ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ইত্যাদি নানা বিষয়ও তার আলোচনায় উঠে আসে।  

আলোচনা সভার সভাপতি ও সঞ্চালক পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিআরসি অবশ্যই প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও এই কথা শোনার আগ্রহ থাকতে হবে, ন্যায্যতা নিশ্চিত করার সংস্কারে এগিয়ে আসতে হবে।  

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ)-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, এখন শ্রম আইনের সংশোধনের কথা আসলে আমরা চা শ্রমিকরা আতঙ্কে থাকি। পূর্বে সব সংশোধনেই চা শ্রমিকদের কোনও না কোনও দিক দিয়ে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমান সংস্কার কমিশন নিয়ে আমরা আশাবাদী; আমরা চাই বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেন চা শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

সিএইচটি নারী হেডম্যান কারবারি নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন পার্বত্য চুক্তির যথার্থ বাস্তবায়ন হয়, রেগুলেশনের কোনও পরিবর্তন না হয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের সাথে কীভাবে এই জনগোষ্ঠীর সংযোগ স্থাপন করা যায় তা নিয়ে ভাবার সময় এখন। সেড, পিপিআরসি’র মতো সংগঠণ আমি মনে করি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।’     

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ এম হাশেমী বলেন, ‘এরকম জনগোষ্ঠীর জন্য যদি সরকার একটি আর্থ-সামাজিক শুমারি (সোস্যাল ইকোনমিক সেনসাস) করতে পারতো তবে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে উঠে আসতো। এ ধরণের আলোচনা সংকীর্ণ পরিসরে রাখলে চলবে না, জোরালো কন্ঠে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ভূমি সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, ২০১৫-১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের হাজার-হাজার একর জমি পড়ে আছে। এরকম প্রান্তিক ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকারের খাস জমি বন্টনের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ১৯৮৯ সনের ইনডিজেনাস ও ট্রাইবাল পিপলস কনভেনশন-এ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে এমন আশাই তিনি ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল বলেন, সরকারের উপদেশে আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করলাম, কিন্তু দিন শেষে তো সেই ঝাড়ু হাতেই তাদের কাজে নামতে হয়। একজন কৃষকের সন্তান যদি সরকারের উচ্চ পদে চাকরি পান, তবে আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীর সন্তান কেন পাবে না?

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার এজেন্ডার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়। 

হিজড়া সংগঠন কথা কলা কেন্দ্র এর মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা ও আলোচনা সভা শেষ হয়।