বাসস
  ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯

বরগুনায় থেমে আছে ২৬ সেতুর কাজ

বরগুনা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলায় নানা অনিয়মের কারণে গত ৫ বছর ধরে স্থবির হয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় নির্মাণাধীন ২৬টি সেতুর কাজ। কোথাও কোথাও এসব সেতুগুলোর আংশিক কাজ করে লাপাত্তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাধ্যে । 

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় নির্মাণ শুরু  হয়ে স্থবির হওয়া ২৬টি সেতুর কাজের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১১টি, আমতলী উপজেলায় ৭টি, বেতাগী উপজেলায় ৫টি এবং তালতলী, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলায় একটি করে সেতু রয়েছে। নির্মাণাধীন ২৬টি সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭০ টাকা। এসব সেতুগুলো কাজ শুরুর পর থেকে এক বছরের মধ্যে হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও  ৫ বছরেও তা হস্তান্তর হয়নি। স্থানীয়দের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। 

আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালের সোনাখালী এলাকায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি। যা কাজ শেষে নিয়মানুযায়ী হস্তান্তর করার কথা ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারির মধ্যে। এরপর কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও তা শেষ হয় গত (২০২৩) বছরের ১৩ নভেম্বর। কিন্তু কাজ তো শেষ হয়নি, দীর্র্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সেতু নির্মাণের কাজ। সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী এ পর্যন্ত সেতুর কাজ সমাপ্ত হয়েছে ৭০ ভাগ। যার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। এ সেতুটির কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে স্কুল-মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীসহ স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বললেও এরপর আর ফোন রিসিভ করেননি।

জেলার আমতলী-তালতলী সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার সংলগ্ন খালে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬০ মিটার গার্ডার ব্রীজের কাজ। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ ভাগ। এমনকি এরপর কাজের মেয়াদও বাড়ায়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ এ সড়কটি জেলা শহরসহ আমতলী-তালতলী দুই উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়ক। এছাড়া প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহন বাস গাড়িসহ অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বরগুনা জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: ছগির হোসেন জানান, একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার কারনে কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। তবে বর্তমানের কাজ চলমান আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।

একই ঠিকাদার মো: ছগির হোসেন বরগুনা সদর উপজেলায় আরও ৮টি ব্রীজের কাজ করছেন। যার মধ্যে ৬টির কাজ শেষ হয়েছে ৯০ ভাগ এবং দুটির কাজ শেষ হয়েছে ৬০-৬৫ ভাগ। বাকী কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় নির্মাণাধীন ব্রীজগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচলসহ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মো. ছগির হোসেন বলেন, ৯০ ভাগ কাজ শেষ হওয়া ৬টি ব্রীজের সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেগুলো অনুমোদন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। বাকি দুটি ব্রীজের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার কালিরতবক ভায়া গোলবুনিয়া খেয়াঘাট সংলগ্ন খালে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৬ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। যা শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ৪ মে। কিন্তু এখনো ব্রীজের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে স্থানীয়রা। 

জেলার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার গার্ডার ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই। যা শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর। কিন্তু কাজ শেষের মেয়াদের চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬৫ ভাগ। এ কাজের ঠিকাদার হলেন, হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর লাপাত্তা শহীদ। বন্ধ রয়েছে মোবাইল ফোন।   

এভাবে কাজ স্থবির হয়ে আছে জেলার ২৬টি সেতুর। ফলে স্কুল-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী, যানবাহন ও যাত্রীসহ ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দাবি স্থানীয়দের।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ব্রিজের কাজ গুলো শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। 

বরগুনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান জানিয়েছেন, সকল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যেই ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত নোটিশ করেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় চুক্তি বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।