শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : আজ এক আলোচনা সভায় শিক্ষাবিদ ও লেখকরা জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি গঠনে এবং প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের অপরিমেয় তৃষ্ণা জাগিয়ে আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
তারা বলেন, অধ্যাপক রাজ্জাক ঔপনিবেশিক আমলে মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের বিকাশের পাশাপাশি এই অঞ্চলের রাজনীতিতে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছেন যা এখনও রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় প্রাসঙ্গিক।
এখানে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক স্মরণে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউইউ) প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ এবং বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মাদ নায়েব আলী।
অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, কলকাতা বুদ্ধিজীবী অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের খুব কম জায়গা ছিল যা অধ্যাপক রাজ্জাক তার অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ আজম বলেন, “অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন উদারনৈতিকতার এক চমৎকার উদাহরণ, যিনি প্রতিটি পরিবর্তনকে পূর্ণ মূল্য দিয়ে তার সময়ের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে সফলভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
অধ্যাপক আজম বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের ঔপনিবেশিক আধুনিকতা এবং ঔপনিবেশিক পাশ্চাত্যায়নের সমালোচনা করা সত্ত্বেও তিনি উপনিবেশের ইতিবাচকতা গ্রহণে কোনো দ্বিধাগ্রস্ততায় ভোগেননি।
তিনি বলেন, “অধ্যাপক রাজ্জাক যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আন্দোলন উভয়েরই সমর্থক ছিলেন। তা স্বীকার করা নিয়ে তার কোনো সন্দেহ ছিল না। বরং তিনি সবসময় যুক্তি দিয়ে এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর উদ্ভূত প্রতিটি জটিল সংকটের সহজতম ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি। আজকের বাস্তবতায়, যে কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট মোকাবেলায় আমাদেরকে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মতো একজন দূরদর্শীকে অবলম্বন করতে হবে।
আমলাতন্ত্রের উপর অধ্যাপক রাজ্জাকের পর্যবেক্ষণের উদ্ধৃতি দিয়ে, ইউপিএল সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, রাজ্জাক তার থিসিসে ব্রিটিশ আমলে রাজনৈতিক আন্দোলনের উপর আমলাতন্ত্রের প্রভাব উপস্থাপন করেছিলেন যা শেষ পর্যন্ত উপমহাদেশের রাজনৈতিক গন্তব্যে যাওয়ার উপায়গুলোকে ছাপিয়েছিল।
লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ১৯৪০ এবং ৫০ এর দশকে সাহিত্য ও বুদ্ধিজীবী এলাকায় আধিপত্যের কারণে সমগ্র বুদ্ধিজীবী এলাকা এবং তৎকালীন ঢাকার প্রায় সব ব্যক্তিত্বই কোনো না কোনোভাবে কলকাতার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
তিনি বলেন,কলকাতার আধিপত্যের বিরুদ্ধে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন, যিনি পূর্ব বাংলার উদীয়মান বুদ্ধিজীবীদের জন্য প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের অপরিমেয় তৃষ্ণা জাগিয়ে তাদের বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিলেন।
বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব আরও বলেন, এই সময় প্রতিটি বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ব হয় কলকাতা থেকে চলে এসেছেন অথবা কলকাতায় উল্লেখযোগ্য জীবন কাটিয়েছেন। অধ্যাপক রাজ্জাক বাঙালি মধ্যবিত্ত ও সমসাময়িক রাজনীতিতে নতুন চিন্তা ও পর্যবেক্ষণ গড়ে তুলেছেন।