শিরোনাম
ঝিনাইদহ, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলার চিত্রা নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে ৯৪টি স্থাপনা ও পুকুর 'অবৈধ' হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। দখল ও দুষণ রোধে এসব স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বর্তমান অর্ন্তবতীকালীন সরকারের পানি সম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এরই মধ্যে দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকাও প্রণয়ণ করা হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারির, শুরুতে চিত্রা নদীর বুকে গজিয়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা, পুকুর ও বাঁধ উচ্ছেদ করা হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে। দখলমুক্ত করা গেলে এক সময়ের প্রমত্তা নদীটি আবারো প্রাণ ফিরে পেতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, জেলার উপর দিয়ে ১২টি ছোট বড় নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা অংশে চিত্রা নদীর দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১৭১ কিলোমিটার।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী, কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া, কালীগঞ্জ উপজেলা শহর হয়ে তত্বিপুর ও মালিয়াট ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা হয়ে নড়াইলে গিয়ে মিশেছে। এ নদীর উৎপত্তিস্থল চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ অংশে চিত্রা নদীর বেশির ভাগ অংশ জুড়েই বিগত ১৬ বছরে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছিল প্রভাবশালী দখলদাররা। নদীতে বাঁধ দিয়ে শত শত পুকুর তৈরি করা হয়েছিল। নদীর তীরবর্তী বাজার এলাকায় অবৈধ দোকানপাট ও বাড়িঘর তৈরি করেছে দখলবাজরা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, জিয়ানগর, হাজরা, লক্ষ্মীপুর, মোহাম্মদপুর ও গোবিন্দপুর এলাকায় নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
এছাড়া কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার, ইকড়া, কালীগঞ্জ পৌর শহরের পুরাতন বাজার, বলিদাপাড়া, হেলাই, নিমতলা, নদীপাড়া ও ফয়লা এলাকায় দখল হয়ে গেছে এক সময়ের প্রমত্তা চিত্রা।
নদীর মাটি কেটে ব্যক্তিগত কাজেও লাগাচ্ছেন কেউ কেউ। কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামে নদীর মধ্যে ৮টি পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। ফলে এক সময়ের প্রমত্তা চিত্রা তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়েছে। দখলের ফলে ভরাট হয়ে গেছে চিত্রার কোনো কোনো অংশ। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা চরমে পৌছায়।
চিত্রা নদীতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু জানান, জেলার নদ-নদীগগুলো বাঁচানোর এখনই উপযুক্ত সময়। রাজনৈতিক সরকারের আমলে প্রভাব বিস্তার করে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার নজির থাকলেও এখন সেই আশঙ্কা কম। নদী সংস্কারের এটাই সঠিক সময়। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। প্রকৃতি ও জীবন তার হারানো রূপ ফিরে পাবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বাসস'কে জানান, প্রতিটি জেলায় একটি করে নদী দুষণ ও দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অর্ন্তবতীকালীন সরকার। সেই হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় চিত্রা নদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
হালনাগাদ তথ্য মতে চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ অংশে ৬২টি, কোটচাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর বাজারে ১১টি ও একই উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামে ২১টি স্থাপনা ও পুকুর উচ্ছেদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আগামী বছরের (জানুয়ারির শুরুতেই এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বাসস'কে বলেন, ইতিমধ্যে দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নদীর বেশির ভাগ অংশ কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত। চিত্রা নদীর ৩০ কিলোমিটারে ৯৪টি অবৈধ স্থাপনা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রয়েছে ভবন, পুকুর, দোকান, বাজার, ঝুলন্ত স্থাপনা ও মুরগীর খামার। উচ্ছেদের আগে স্থাপনার মালিক ও কর্তৃপক্ষকে আমরা নোটিশ দিয়ে জানাবো। মাইকিং করেও প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।