শিরোনাম
টাঙ্গাইল, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ (বাসস) : যমুনা নদীর ওপর নির্মিত রেলওয়ে সেতুর কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নবনির্মিত রেল সেতুতে প্রথমবার পরীক্ষামুলক চলল ট্রেন। এ সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী জানুয়ারিতে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে উদ্বোধনী পরীক্ষামূলক ট্রেনটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে যায়। এ সময় যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়র কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফ্রান্সের মার্ক হবি, নির্মাণ ব্যবস্থাপক জাপানের মি. ইপোমাফসু, ট্রাক এক্সপার্ট জাপানের নাকাজিমা, নিরাপত্তা প্রকৌশলী কামরুল হাসান চৌধুরী সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরীক্ষা মুলক ট্রেনটি পরিচালনা করেন, মাইনুল ইসলাম এবং সহকারী চালক ছিলেন আব্দুস সালাম। পরীক্ষামূলক ট্রেনের প্রথম চালক মইনুল ইসলাম জানান, আমার খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম ট্রেনটি আমি চালাবো। আমার ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ট্রেনের শুরুতে ঘণ্টায় গতি ছিল ১০ কিলোমিটার, পরেবার ঘণ্টায় ট্রেনের গতি ছিল ২০ এবং ৪০ কিলোমিটার। তবে ট্রেনের পূর্ণ গতি পেতে সময় লাগবে আরও দুই মাস।
যমুনা রেল সেতু রেলওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের এই দীর্ঘতম রেল সেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বাঁচবে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতুর পূর্ব প্রান্তে নতুন রেল স্টেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন, এবং সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তের রেল স্টেশনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে সেতু নির্মাণ রঙ-তুলি ও ঘষামাঝার কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে পিডি আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, আজ মঙ্গলবার সকালে উদ্বোধনী পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে। ট্রেনের তিনটি বগি নিয়ে একটি ইঞ্জিন সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে যায়। পরে ট্রেনটি ১০টা ৪১ মিনিটে পূর্বপাড়ে ফিরে আসে। প্রথমে ১০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করলেও পরে ৪০ কিলোমিটার বেগে আরও ট্রেন দুটি চলাচল করে। তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর ব্যয় তখন ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকায়। যার ১২ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। কিন্তু প্রথমে সংশোধনে এ সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৪ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে যমুনা সেতু দিয়ে ২০ কিলোমিটার গতিতে প্রতিদিন প্রায় ৩৮ট্রেন চলাচল করছে।