বাসস
  ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২৯

রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আইসিসি’র প্রধান কৌঁসুলি : বিচার দাবি রোহিঙ্গাদের

কক্সবাজার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দলটি কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে ৫২ কিলোমিটার দূরের উখিয়ার লম্বাশিয়া (ক্যাম্প-১) আশ্রয়শিবিরে পৌঁছায়। এরপর সেখানকার ক্যাম্প দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে টানা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে প্রায় ৪০জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে দলটি। এরপর তারা ক্যাম্প-৪ পরিদর্শন করেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে এসেছেন নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের দল।

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের একটি রোহিঙ্গা দলের সাথে কথা বলেন। সেখানে দলের সদস্যরা ছাড়া অন্য কারও যাতায়াত সীমিত রাখা হয়। দুপুরে ক্যাম্প-৪ আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করে আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি।

প্রথম বৈঠক শেষে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা আলী হোসেন বলেন, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ক্যাম্প ইনচার্জ কর্তৃক নির্মিত একটি কার্যালয়ে তিনিসহ ৪০ জন রোহিঙ্গাকে ডাকা হয়। যাঁরা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি কথা বলেন কয়েকজনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিতে স্বজন হারানোর স্মৃতি, ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং রোহিঙ্গা মেয়েদের অপহরণের পর ধর্ষণ ও ধনসম্পদ লুটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের সাথে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত সময়ে নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান বলেও জানান রোহিঙ্গারা।

আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন শেষে বিকেল সাড়ে চার টায় তাঁর কার্যালয়ে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ ও পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সেবা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মিজানুর রহমান বলেন, আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গারা আইসিসির প্রধান কৌঁসুলিকে জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ে তারা নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। একই সাথে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। এর জবাবে করিম খান বলেন, বিচার একটি লম্বা প্রক্রিয়া। তারা আইনি লড়াইয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৈঠক শেষে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বিমানযোগে ঢাকায় চলে যান।

এর আগে, সোমবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেন তিনি। একই দিন দুপুরে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের উদ্দেশে কক্সবাজারে পৌঁছেন তিনি। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে করিম খানের এটা তৃতীয় বাংলাদেশ সফর।

কক্সবাজার সফর শেষে ঢাকায় ফিরে করিম খান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের আগস্টের পর রাখাইন থেকে মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে কি না, সেটার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্ত হয়েছে আইসিসি।

এই তদন্তের জন্য সাক্ষী সুরক্ষাবিষয়ক প্রটোকল সইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। করিম খানের এবারের সফরে এ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

অতিসম্প্রতি রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে সব অংশীজনের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে একটি উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সভা চলাকালে রোহিঙ্গা বিষয়ে এই উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আট লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি।