শিরোনাম
খাগড়াছড়ি, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের থাকতে হচ্ছে বারান্দায় ও ফ্লোরে। হাসপাতালের শিশুদের চিকিৎসা সেবা অবস্থা আরো নাজুক। শিশুদের চিকিৎসা সেবা চলছে ধার করা ডাক্তার দিয়ে।হাসপাতালে নেই আইসিওসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ৯ উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের পাশাপাশি পাশের জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু থেকে আসা রোগীরাও।
স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়,২০১৯ সালে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের গায়েলতির কারণে নির্ধারিত মেয়াদে নির্মাণ কাজ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মাধ্যে । সুত্রটি আরো জানায় কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যার বলা হলে ১৯৯১ সালের জনবল অবকাঠানো ও ২০০৫ সালের ৫০ শয্যার চিকিৎসকসহ জনবল নিয়ে চলছে খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসবা সেবা।এ হাসপাতালে ১৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন ১৪ জন চিকিৎসক আর ২৪ জন নার্স এর স্থলে আছে ১৪ জন নার্স । খাগড়াছড়ি হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিনি আউটডোর ও ইনডোরে ৬শত থেকে ৭শত জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে সার্জারি এবং গাইনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও শূন্য। ফলে ছোট ধরনের অপারেশন ও সম্ভব হচ্ছে না এখানে এবং মাতৃত্বকালীন বা প্রসূতির ডেলিভারিও সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে বর্হিঃবিভাগের রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট-সার্জারি,মেডিসিন, গাইনি অনুমোদিত পদ কিছু থাকলেও অধিকাংশ পদই দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য হয়ে আছে। ফলে । অবকাঠানো সংকটে সব চেয়ে বিপাকে পড়ছে শিশু রোগীদের নিয়ে। শিশু ওয়ার্ডে ১৫টি বেডের বিপরীতে ৭০/৮০ জনকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিশু ও নারী রোগীদের থাকতে হচ্ছে বারান্দায় ও ফ্লোরে।
বর্তমানে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে নবজাতক,শিশু কিশোর রোগ বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন পাশ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক ডাঃ মুহাম্মদ ওমর ফারুক ্ তিনি বলেন খাগড়াছড়ি আধূনিক সদর হাসপাতালে শিশু রোগীদের চিকিৎসা সেবা সব চেয়ে নাজুক । হাসপাতালের আদর্শ স্পেশাল কেয়ার নিউর্বন ইউনিটে একজন কনসালটেন্ট ও ৮ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও সবগুলো পদশূন্য। এছাড়াও গড়ে প্রতিদিন ১০/১২ জন রোগী থাকলেও ফটোথেরাপি মেশিন রয়েছে মাত্র ৪টি।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার রিপল বাপ্পি জানান চিকিৎসক ,জনবল ও আবাসন সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ।
এদিকে জনবল ও আবাসন সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ২৫০ শয্যার খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের ভবনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬০ ভাগ।আর কবে নাগাদ ৫০০ শয্যার ভবনে কাজ শেষ হবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
অপর দিকে স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদার সুবিধাভোগী ও প্রভাবশালী হওয়ায় নিজের খেয়াল-খুশিমত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমানে তিনি ভোল পাল্টিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তদের হুমকি দিচ্ছেন ।এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
২৫০ শয্যার ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ সম্পন্ন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার শহীদ তালুকদার। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের অবকাঠানো ও জনবল দিয়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাবে না।
অপরদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি ঠিকাদার যেখানে ২৫০ শয্যার ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করেনি সেখানে ৫০০ শয্যার ভবনের কাজ কখন শেষ করবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।