শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): আমাদের দেশের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং সকল ধর্মের মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে থাকতে ভালোবাসে। এটা কখনোই ভাঙবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাইকোর্ট।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনাটি রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে বলে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চকে আজ জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।
চট্টগ্রামের আইনজীবী হত্যার ঘটনার সরকারের পদক্ষেপের অগ্রগতি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, এই ঘটানাটিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে ৩ টি মামলা হয়েছে। একটিতে ১৩ জন, একটিতে ১৪ জন ও অপর একটি ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৬ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে।
এসময় হাইকোর্ট বলেন, ‘রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এটা শুনে আমরা আস্বস্ত হলাম। এটাই ওনাদের দায়িত্ব। আশা রাখি সবাই এটা শুনে আস্বস্ত হবেন। দেশের জানমালের কোন ক্ষতি না হোক আমরা সেটাই চাই। যেহেতু সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলা হলো তাই এই মুহূর্তে আদালত আর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখছে না। আমরা মনে করি আমাদের দেশের মানুষ সৌহার্দপূর্ণ। এদেশে সকল ধর্মের মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে থাকতে ভালোবাসে। সে ভালোবাসা কখনোই ভাঙবে না। আর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।’
গতকাল হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থিত হয়ে ইসকন নিষিদ্ধ চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির উদ্দিন। সেই সাথে এই আইনজীবী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রামের ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আবেদন করেন এবং অন্তত দুই সপ্তাহ জরুরি অবস্থা জারির আবেদন জানান।
এক পর্যায়ে আদালত এটর্নি জেনারেলের মো: আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শুনেন। এটর্নি জেনারেল গতকাল হাইকোর্টকে বলেন, ‘ইসকনের ইস্যুটি দুর্ভাগ্যজনক। এটা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ফৌজদারি অপরাধ। সরকার গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি দেখছেন এবং যথাযথ আইনী পদক্ষেপ সরকার নেবেন। তবে এই সংগঠন রেজিস্ট্রার্ড কি না? এই সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কি না? এই সংগঠনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এই সংগঠনের অস্তিত্ব কি? এর সবকিছু সরকারের পলিসি ডিসিশানের বিষয়। সরকার এটার খোঁজ খবর নিয়ে যথাযথ আইনি ভাবে বিষয়টি দেখবেন। এই পর্যায়ে কোন রুল ও নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সবকিছু পর্যালোচনা করে তার পর যদি মনে হয় তখন দেখা যেতে পারে।’
হাইকোর্ট বিষয়টি আজ জানাতে গতকাল নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টকে আইনজীবী হত্যার ঘটনাটিতে আজ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখার বিষয়টি অবগত করেন।
গত মঙ্গলবার আদালত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ আদেশের পর আদালত চত্ত্বরে চিন্ময়ের বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা প্রিজনভ্যানের চারদিকে শুয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সরিয়ে দিতে টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আদালত এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সহকারি সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফকে (৩৫) কুপিয়ে আহত করা হয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাইফুল ইসলাম লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। সাইফুল ইসলাম আলিফ চট্টগ্রাম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য।
গতকাল তার জানাজা লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
এডভোকেট আলিফকে হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আইনজীবী সমিতিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।