শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষ একটা জটিল পরিবেশ থেকে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। রাষ্ট্রপুনর্গঠনে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকার যখন কাজ করছে, তখনই কেমন যেন একটা ভয়াবহ অবস্থা তৈরির পাঁয়তারা চলছে। এটা পরিকল্পিতভাবে পরাজিত ফ্যাসিবাদীরা সৃষ্টি করছে। আন্দোলনের বিজয়কে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সেমিনার কক্ষে জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন,‘একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে জটিল কাজ। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হতে পারে না। আমাদের সমাজে,রাষ্ট্রে যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদের আগমন না ঘটে, সে বিষয়ে লেখক-সাহিত্যিকদের সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ্যভাবে ফ্যাসিবাদ রুখতে হবে। সেখানে সংস্কারের জন্য মত দেবেন লেখক-শিল্পীরা। সার্বভৌমত্ব যেন হুমকির মুখে না পড়ে সে দিকেও লেখক-শিল্পীদের দৃষ্টি রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল এসময় তরুণদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা যেন দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করেন সেজন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক ও কবি সোহরার হাসান, লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির’র সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মনি, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সম্পাদক ও কবি শওকত হোসেন।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা করেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। স্বাগত বক্তৃতা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিষদের আহবায়ক কবি মোহন রায়হান।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এই ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে জনগণ যে আত্মত্যাগ করেছে তার তুলনা নেই। সংস্কার করবে জনগণ। সেই সুযোগ তাদেরকে করে দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। লেখক-শিল্পীদের আরো সোচ্চার হতে হবে। জনসাধারণের কাছ থেকে সেই শিক্ষা নিতে হবে।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, রাষ্ট্র পূণর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিবিপ্লব সংগঠিত হতে পারে। সে ব্যাপারে লেখক ও শিল্পীসহ রাজনীতিকদের সতর্ক থাকতে হবে।
কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, সব সময় কবি- শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা সমাজ সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্মম আর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ফ্যাসিস্টরা। তারা ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এসব ফ্যাসিস্টদের রুখতে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা চাই নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে সহায়ক হবে লেখক ও শিল্পীরা। একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিনির্মাণে লেখক—শিল্পীদের সতর্ক থাকতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার লেখক-শিল্পীদের বড় অংশকে তাবেদারে পরিণত করেছিলো।
সাইফুল হক বলেন, গত ফ্যাসিস্ট সরকারকে যে সমস্ত লেখক-শিল্পীরা ‘না’ বলার সাহস দেখিয়েছেন-তাদের শ্রদ্ধা জানাই। আর কোন লেখক, কবি ও শিল্পীরা যেনো স্বৈরশাসকের দোসর না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মোহন রায়হান বলেন, যদি কোন ফ্যাসিবাদী সরকার ফিরে আসতে চায়। কবিরাই প্রথম প্রতিহত করবে। কবি-শিল্পীরা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করবে।