শিরোনাম
খাগড়াছড়ি, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : এক সাফল্য গাঁথার নাম খাগড়াছড়ির পাবলাখালী বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ও পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারী রেঞ্জ ।
অসংখ্য সুউচ্চ বৃক্ষ, লতা গুল্ম ও প্রাকৃতিক ঝোপের কারণে বনটি চিরহরিৎ রূপ পেয়েছ। বন্যপ্রাণির নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্রও হয়ে উঠেছে প্রায় ২শ বছরের পুরনো এ বন। বন রক্ষায় পাওয়ায় পুরো জনপদের জন্য তা আশীবার্দ হয়ে উঠেছে!
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন পাবলাখালী রেঞ্জ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ প্রায় ২শ বছরের পুরনো এ বন রক্ষায় কাজ করছে।
পুরো বনজুড়ে চিরহরিৎ উদ্ভিদের প্রাধান্য । সম্প্রতি পাবলাখালী বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ও পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারী রেঞ্জ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শীতের শুরুতে শুষ্ক মৌসুমেও পুরো বন সবুজ হয়ে উঠেছে। দৃষ্টি সীমা জুড়ে নানা প্রজাতির চিরহরিৎ বৃক্ষের সমাহার। বন টিকে থাকার পিছনে বন বিভাগের পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
বন বিভাগের নিয়মিত নজরদারি,স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বন রক্ষার গুরত্ব উপলদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়া, বনের ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ একাধিক উদ্যোগ নেওয়ার কারণে পাবলাখালী অভয়ারণ্য চিরহরিৎ রূপ পেয়েছে।
বনের ভেতরে চলতে চলতে সারোয়াতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা সূর্যলাল চাকমা’র সঙ্গে কথা হয়। তাঁর বয়স প্রায় ৫০ ছুঁইছুঁই। তিনি জানান,‘ আমি ছোট বেলা থেকে বনটি দেখে আসছি। ছোট বেলায় বনের ভেতরে যে বৃক্ষগুলো দেখেছি। সেগুলো এখনো রয়েছে। দিনে দিনে গাছগুলো উঁচু হয়েছে। এখানে অসংখ্য বড় বড় গাছ রয়েছে। বাইরে থেকে কোন বহিরাগত গাছ কাটার জন্য প্রবেশ করতে পারেনা। স্থানীয়রাও রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে কখনোই গাছ কাটে না। ‘বন না থাকলে ঝিরিতে পানিও থাকবে না’ এটি এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে। ফলে কেউ গাছ কাটে না এবং অন্যদেরও কাটতে দেয় না।’তিনি আরো বলেন,‘বন বাঁচলে তো আমরা বাঁচব।’
একই গ্রামের বাসিন্দা তারুম চাকমা জানান ,‘বনের ভেতরে বড় বড় গাছপালা রয়েছে। কিন্ত কেউ গাছ কাটে না। বাইরের কোন মানুষ বনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। বন থাকার কারণে ছড়া ,ঝিরিতে সারা বছরই পানি থাকে। ঝিরির পানিতে আমরা জমির চাষ করি। বনে গাছপালা না থাকলে ঝিরি শুকিয়ে যেত। ’
পাবলাখালী বন্য অভয়ারণ্য ও পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারী রেঞ্জে সেগুন, গর্জন, গামার, সিভিট, লম্বু, তেলসুর, চাপালিশ, জলপাই, উড়ি আম, খুদে জাম, হরতকি, বহেরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ দেখা গেছে।
পাবলাখালী বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য রেঞ্জে বন রক্ষায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে রিকো চাকমা,অভিজিৎ চাকমা ,জহরুল লাল রুদ্রসহ ৬ বন কর্মী । তারা জানান,‘আমরা নিয়মিত বন রক্ষায় কাজ করি। শিফট ভিত্তিক বনের ভেতরে টহল দিই। বন রক্ষায় স্থানীয় মানুষেরাও আমাদের সহযোগিতা করে। বনে টহল দেওয়ার সময় আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে করে নিয়ে যাই। বনের শতবর্ষী বৃক্ষ যাতে কেউ কাটতে না পারে সেজন্য আমরা সর্তক থাকি। ’
পাবলাখালী রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজীব মজুমদার জানান ,‘ গেইম সেঞ্চুয়ারি বলতে বোঝায়- একটি নির্দিষ্ট বন এলাকা যে সর্বসাধারণের প্রবেশ অধিকার সংরক্ষিত। বন্যপ্রাণি সব নিরাপদে বেড়ে উঠবে এবং বন্য প্রাণির গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ্এটা বন্য প্রাণির নিরাপদ আবাস স্থল।
পাবলাখালীতে আমরা সেটা করতে পেরেছি। বন্য কর্মীরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সহায়তায় পাবলাখালী অভায়রণ্য সমৃদ্ধ হয়েছে।
এছাড়া বনে মাতৃবৃক্ষ টিকে থাকায় এটি বন্যপ্রাণির অভয়াণ্য হয়ে উঠেছে। মায়া হরিণ, ভাল্লুক, অজগরসহ নানান প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, শুকর, ময়না, টিয়াসহ নানান প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তবে বন রক্ষায় জনবল অপ্রতুল। ’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র জানান ,‘ পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারী রেঞ্জ ও পাবলাখালী বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য পুরোটায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটি রক্ষায় একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বনের ফাঁকা অংশে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাকৃতিক পুর্নজন্ম সহায়তাকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০ হেক্টর জমিতে দশ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া বন রক্ষায় ২০ বছর মেয়াদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে । যা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে বন আরো নিরাপদ হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন,‘ বন
রক্ষায় আমরা স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে কনভিন্স করতে পেরেছি। তারা বন বিভাগকে সহায়তা করছে। কেউ গাছ কাটে না । ফলে বনটি অক্ষত রয়েছে।
’তবে বন রক্ষায় জনবল সংকট রয়েছে বলে জানান তিনি। ’